Leadসংবাদ শিরোনাম

মোদির তিন প্রশ্নেই ঘায়েল খালেদা

khalada modiঢাকা জার্নাল : প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ‘নালিশ’ করতে গিয়ে উল্টো তারই প্রশ্নবাণে জর্জরিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ঢাকা সফরের সময় হোটেল সোনারগাঁওয়ে একান্ত বৈঠকে মোদির করা অন্তত তিনটি প্রশ্ন’র কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। খবর বেরিয়েছে, এ সময় ‘চরম বিব্রত’ ছিলেন তিনি।

গত রোববার (৭ জুন) বিকেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর বিদেশি সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘সুন্দর’ আলোচনা হয়েছে। তার মুখপাত্র ড. আব্দুল মঈন খান বলেছিলেন, ‘চমৎকার আলোচনা হয়েছে! ইংরেজিতে যাকে বলে, ‘এ করডিয়াল এটমসফেয়ার!’

কিন্ত মোদি-খালেদা বৈঠকের বিষয়বস্ত নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এ নিয়ে দলীয় পরিমণ্ডলেও কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকের খবরও নেই।

তবে বুধবার (১০ জুন) কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্টেটসম্যানের এক খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির করা তিনটি প্রশ্নে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন তিনি।

‘গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ জানাতে এসে, খাগড়াগড় নিয়ে মোদির প্রশ্নে বিব্রত খালেদা জিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত মানস ঘোষের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সরকারিভাবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য উদ্যোগী হন। ঢাকায় ভারতীয় কূটনীতিকদের কাছে তার দলের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় দেন-দরবার করেন।

বিএনপির আশঙ্কা ছিল নরেন্দ্র মোদি খালেদা জিয়াকে সাক্ষাতের জন্য সময় নাও দিতে পারেন। কিন্তু মোদি সে পথে না গিয়ে সাক্ষাতের সুযোগ দেন বিএনপি প্রধানকে।

বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মাথায় রেখে আগে-ভাগেই পুরো হোমওয়ার্ক করে নিজেকে তৈরি করেন নরেন্দ্র মোদি।

বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে মোদির কাছে নালিশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণতন্ত্র ও দায়বদ্ধতা। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। এখানে বিএনপির নেতা-কর্মী ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চলছে।

দৈনিক স্টেটসম্যানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কথা শেষ হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রশ্ন করেন, যা তাকে রীতিমত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হন।

স্টেটসম্যানের মতে, মোদির প্রথম প্রশ্ন ছিল- ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বানচাল করতে কারা সেদিন ঢাকায় হরতাল ডেকেছিল?

বেগম জিয়া উত্তরে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য জোটসঙ্গিরা যৌথভাবে হরতালের ডাক দিয়েছিল। মোদি খালেদা জিয়ার জবাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

মোদির দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ২০০৪ সালে চীন থেকে গোপনে দশ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধভাবে খালাস করে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে আয়োজন করা হয়েছিল সেটা ঘটেছিল আপনার (খালেদা জিয়ার) প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়। আর সেই গোপন আমদানির সঙ্গে আপনার ক্যাবিনেটের স্বরাষ্ট্র ও শিল্পমন্ত্রী জড়িত ছিলেন। শোনা যাচ্ছে আপনি এবং আপনার দল ওই ঘটনার তদন্তে খুব একটা সাহায্য করেননি?

সূত্রের বরাতে স্টেটসম্যান বলছে, খালেদা জিয়া মোদির এই প্রশ্ন শুনে এতটাই বিব্রত হন যে, তিনি তার কোনো জবাবই দিতে পারেননি। চরম বিব্রত অবস্থায় চুপ করে বসে থাকা ছাড়া তার কোনো উপায় ছিলো না।

মোদির তৃতীয় প্রশ্ন ছিল বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জানান, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততার কথা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ তদন্তে উঠে আসছে। বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের আড়াল না করে তাদের শাস্তি দানের জন্য তদন্তকারীদের সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া তার (খালেদা) নৈতিক দায়িত্ব।

এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়া কোনো জবাব দেননি। মোদির এ প্রশ্নেও তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন বলে জানায় স্টেটসম্যান।

এদিকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ড. মঈন খান বলেছিলেন, মোদি-খালেদার বৈঠকে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির বিষয়টি উঠে এসেছে। মোদি যেহেতু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে ভারতের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সেহেতু প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টি এসেছে।

পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, খালেদা জিয়ার নালিশ  শোনার পর নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত গণতন্ত্রকে সমর্থন করে এবং সব ধরনের মৌলবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মক‍াণ্ডকে অসমর্থন করে।

ঢাকা জার্নাল, জুন ১৩, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.