ছুঁয়ে আছেন মাদার তেরেসা
এস এম আববাস : সততা ধরে রাখা যায় সারাজীবন। হোক না তা যে কোনো পেশা। শুধু ব্রতী হতে হয় কল্যাণে, আত্মনিয়োগ করতে হয় পরিশ্রমে। কর্মজীবনে নিষ্ঠা ও সহজ-সরল জীবনাচরণ আয়ত্ত করা গেলেই এটা সম্ভব।
সংসার জীবনে পুরোপুরি সচ্ছল না হলেও সৎভাবে জীবনযাপনের চেষ্টায় রত এমনই একজন মানুষ রাজশাহীর মো. আব্দুস সোবহান মিঞা। যিনি সারা জীবন তার সততা ধরে রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন।
কর্মজীবনে অসৎ হওয়ার অনেক সুযোগ থাকলেও অসততা ছুঁতে পারেনি তাকে। কারণ তাকে ছুঁয়ে আছে মাদার তেরেসা ও তার জীবনাদর্শ।
সোমবার (৮ জন) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘মাদার তেরেসা সম্মাননা-২০১৫’ দেওয়া হয় মো. আব্দুস সোবহান মিঞাকে। তাকেসহ সমাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার জন্য দেশের ১০জন গুণী ব্যক্তিকে এ সম্মাননা দেয় মাদার তেরেসা স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
পুরস্কার নেওয়ার পর বাংলানিউজকে আব্দুস সোবহান বলেন, মাদার তেরেসার জীবনাদর্শ ছুঁতে চেয়েছি। হয়তো পেরেছি, হয়তো পারিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, ইচ্ছে থাকলে সারা জীবনই সৎ থাকা যায়। আমার যে পেশা তাতে অসৎ হওয়ার মতো সহজ কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। এখানে সৎ থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। তারপরও চেষ্টা করেছি সৎ থাকার। সারাজীবন সৎ থাকব বলেই ব্রত নিয়েছি।
সংসার জীবনের কথা তুলে ধরে আব্দুস সোবহান জানান, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। স্ত্রী নাজমা বেগম গৃহিনী। ছেলে আবুল হাসনাত মো. সোবহান ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স শেষ করে মায়ের গড়া ছোট্ট একটি আবাসিক হোটেল চালান। মেয়ে নুসরাত মেহজাবিন সুমি এলএলএম পড়ছেন।
স্ত্রীর আবাসিক হোটেল ভবনের নিচ তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস আব্দুস সোবহানের। তবে পার্টনারের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যে বেতন পান সেটাই তার একমাত্র উপার্জন। স্থাবর বা অস্থাবর কোনো সম্পত্তি নেই তার, নিজেই জানালেন পার্টনারের এ নির্বাহী পরিচালক।
নিজের কর্মজীবনের কথা তুলে ধরে আব্দুস সোবহান জানান, রাজশাহী শহর ও জেলার বিভিন্ন গ্রামে বেসরকারি সংস্থা পার্টনারের নানা কার্যক্রম রয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার রক্ষা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের সেনিট্রেশন, নারী ও শিশু পাচার রোধে জনসচেতনতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বৃক্ষরোপন, শিশুশিক্ষা, দুস্থ মা’দের সঞ্চয় ও প্রশিক্ষণ এবং আয়মুখী কর্মসূচি।
ল্যাথারিজম প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। সেই থেকে এ সংস্থার সঙ্গে আছেন আব্দুস সোবহান। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ‘ডিয়াকোনিয়া বাংলাদেশে’র সহযোগিতায় চলেছে সংস্থাটি। ১৯৯৫ সাল থেকে ‘পার্টনার’ নাম নিয়ে মো. আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বেই এর নতুন যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর ও নওগাঁর মান্দা উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে সুনামের সঙ্গে এর কার্যক্রম চলছে।
আব্দুস সোহবান তার নেতৃত্বে একদল কর্মী নিয়ে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিতকরণ, বাল্য ও বহুবিবাহ প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, শিশুশিক্ষা কার্যক্রম, মাদক প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করে থাকেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মসূচি ছাড়াও নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম, বন্যাকবলিতদের পুনঃর্বাসনে সহযোগিতা, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ এবং বৃক্ষরোপন অভিযানে ব্যক্তিগতভাবে ও সংস্থার পক্ষ থেকে অংশ নেন তিনি।
২০১১ সালে বেসরকারি সংস্থা ক্যাটগরিতে বৃক্ষরোপনের জন্য দেশব্যাপী প্রথম হয় তার সংস্থা ‘পার্টনার’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সংস্থার পক্ষে পুরস্কার নেন আব্দুস সোবহান।
সংস্থার কাজ নিয়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। সামজিক সংগঠন রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন, ডায়াবেটিক সমিতি, পরিবার পরিকল্পনা সমিতি রাজশাহী শাখা ও শিরোইল ক্লাবের তিনি আজীবন সদস্য। এছাড়া চাষী অধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি, রাজশাহী এলাইন্স ও রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগারের সদস্যও তিনি।
মাদার তেরেসা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আর কে রিপন বলেন, মাদার তেরেসোর জীবনাদর্শে অনুপ্রাণিত সবমানুষই সত্যিকারের মানুষ। সমাজের কাছে এসব মানুষদের তুলে ধরা ও তাদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তাহলে অন্যরাও সমাজ ও মানুষের কল্যাণে পাশে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত বোধ করবেন। সৌজন্যে- বাংলানিউজ।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১২, ২০১৫