Leadসংবাদ শিরোনাম

বুদ্ধিজীবী হত্যায় জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

শহীদঢাকা জার্নাল: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি জেয়াদ আল মালুম শুক্রবার রাতে এ খবর জানিয়েছেন।

তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত এটুকুই থাকুক, বিষয়টা অনেক কনফিডেন্সিয়াল।’
জামায়াতের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ আনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো অভিযোগ থাকবে। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ অন্যতম।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ১৯৭৩-এর মুল আইনে মানবতা বা গণহত্যার জন্য কেবল ব্যক্তি বা কোনো গ্রুপের বিরেুদ্ধে মামলা করা যেত বা ট্রাইব্যুনাল শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্ত ২০১৩ সালে আইনের ৩ ধারায় সংশোধনী এনে ‘সংগঠনে’র বিরুদ্ধেও মামলা বা শাস্তি দেয়া যাবে এমন বিধান রাখায় এখন থেকে কোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিললে ওই সংগঠনকে শাস্তি দেয়া যাবে — এমনটাই বললেন প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।

যেসব মামলায় বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রমাণ মিলেছে : এ যাবৎ মোট নয়টি মামলায় দশ জনকে বিভিন্ন ময়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় সরাসরি বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে আসামিকে সাজা দেয়া হয়েছে।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলা : গত ১৭ জুলাই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল- ২।

মামলার সাক্ষী মো. রুস্তম আলী ট্রাইব্যুনালের কাছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বুদ্ধিজীবী হত্যায় ভুমিকা ছিল এমনটা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুজাহিদের নীল নকশায় একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়’।
মাঈনুদ্দিন-আশরাফের মামলা : গত ৩ নভেম্বর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

এককভাবে কোনো মামলায় কেবল বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সাজা এটাই প্রথম মামলা। এ মামলায় সব সাক্ষীরাই ১৪ ডিসম্বের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রত্যক্ষ বর্ণনা দিয়েছেন। আসামিদের পলাতক অবস্থায় তাদের বিচারকাজ শেষ হয়। মাঈনুদ্দীন বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাস করছেন।

নিজামীর মামলা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সব রকম কার্যক্রম শেষ। এখন কেবল রায় ঘোষণার অপেক্ষা। এ মামলায় শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে তার স্বামী আব্দুল আলিম চৌধুরীর হত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ মামলায় নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে কি না, জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। এখন রায়ে কী হয় দেখি।’

যেসব মামলায় জামায়াত অভিযুক্ত হয়েছে : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ পর্যন্ত ৯ মামলায় ১০ জনকে সাজা দিয়েছেন। প্রথম রায় হয়েছে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চুর বিরুদ্ধে গত ২১ জানুয়ারি। শেষ রায় দেয়া হয় চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর।

এ যাবৎ মোট নয়টি মামলার রায়ে প্রত্যেকটিতে জামায়াত ইসলামী দল হিসেবে একাত্তরে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার প্রমাণ মিলেছে। আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.