২০১৭ সালে চালু হচ্ছে না নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি
ঢাকা জার্নাল: বাংলা একাডেমির সংশোধন করা বাংলা বর্ষপঞ্জি ২০১৭ সালে চালু হচ্ছে না। একুশ ফেব্রুয়ারিসহ অন্যান্য জাতীয় দিবস, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী, নজরুল জন্মজয়ন্তীর ইংরেজি তারিখের প্রতিষঙ্গী বাংলা তারিখ ঠিক রেখে তা ২০১৮ সাল থেকে চালু করা হবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছে দেরিতে তথ্য পাওয়ার কারণে এ বছর তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রায় ছয় মাস আগেই বাংলা একাডেমি সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি পাঠায় মন্ত্রণালয়ে। শেষ সময়ে তার খোঁজখবর হলেও প্রশাসনে পদোন্নতিসহ অন্যান্য জরুরি কাজে কর্মকর্তাদের ব্যস্ততায় আটকে থাকে বিষয়টি।
ইংরেজি তারিখের প্রতিষঙ্গী বাংলা তারিখ ঠিক রেখে সংশোধন করা বাংলা বর্ষপঞ্জি ২০১৭ সালে চালু করার কথা ছিল। গত ১১ নভেম্বর সদ্য বিদায়ী জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছিলেন যে যথাসময়ে দেখে-শুনেই তারা ব্যবস্থা নেবেন।
তার এ বক্তব্যের পর গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় ২০১৭ সালের সরকারি ছুটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর গত ৩০ নভেম্বর তা প্রকাশও করা হয়।
কেন ২০১৭ সালে সংশোধন করা বর্ষপঞ্জি চালু করা সম্ভব হলো না জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, ‘আমি বিষয়টির দায়িত্বে ছিলাম না। পরবর্তী অফিস সময়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো।’
বাংলা একডেমি থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির দ্বিতীয় সভায় সংশোধিত পঞ্জিকা সংশোধনের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ছয় মাস আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত বর্ষপঞ্জি পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি ইংরেজি বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে ছাপা হবে।
সংশোধিত এই বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে আগের মতো ১৪ এপ্রিল থেকেই বাংলা বর্ষ গণনা শুরু হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (২০১৬) বাংলা একাডেমির দ্বিতীয় সভায় সংশোধিত পঞ্জিকা সংশোধনের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বছরই সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা ইংরেজি বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে ছাপার কথা ছিল। বর্তমানে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী বছর (ইংরেজি সাল ২০১৭) থেকেই এই বর্ষপঞ্জি চালু করা হবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এর আগে জানিয়েছিলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ফাল্গুন মাসের ৮ তারিখ ছিল। কিন্তু আমরা চলমান বাংলা বর্ষপঞ্জিতে ৯ তারিখ পালন করে আসছি। একইভাবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী, নজরুল জন্মজয়ন্তী ইংরেজি তারিখের সঙ্গে প্রতিষঙ্গী বাংলা তারিখ ঠিক নেই। এ বিষয়টিকে ঠিক করতেই বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধন করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমির নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয়মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরিয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে।
পঞ্জিকার এই সংশোধনের ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতিষঙ্গী বাংলা তারিখ হবে ৮ (আট) ফাল্গুন। জাতীয় দিবস ২৬ মার্চের প্রতিষঙ্গী তারিখ হবে ১২ চৈত্র। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ৮ মে’র প্রতিষঙ্গী তারিখ হবে ২৫ বৈশাখ। নজরুল জন্মজয়ন্তী ২৫ মের প্রতিষঙ্গী তারিখ হবে ১১ জৈষ্ঠ্য এবং বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের প্রতিষঙ্গী বাংলা তারিখ হবে পহেলা পৌষ।
অর্থাৎ মূল দিবসের ইংরেজি তারিখেই বাংলা তারিখ যা ছিল তাই ফিরে আসছে।
বাংলা ১৪০২ সাল থেকে যে বর্ষপঞ্জি দেশে প্রচলিত আছে তা ‘শহীদুল্লাহ বর্ষপঞ্জি’। এই বর্ষপঞ্জি অনুসারে বৈশাখ থেকে ভাদ্র প্রতিমাস ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র প্রতিমাস ৩০ দিন। অধিবর্ষে ৩৬৬ দিন বছর গণনায় ফাল্গুন মাস ৩১ দিন। যে বাংলা সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ২ অবশিষ্ট থাকে সেই বাংলা সাল অধিবর্ষ বা লিপইয়ার হিসেবে গণ্য হয়।
ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ০২, ২০১৬।