১৫ বছরেও ক্ষতিপূরণ পাননি বিধবা শাহীনা
ঢাকা জার্নাল: পনের বছর আগে সৌদী আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ওমর ফারুক। তার পর থেকেই বিধবা জীবন মেনে নিয়ে তিন সন্তান বুকে আগলে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শাহীনা। ভরসা ছিল স্বামীর ইন্স্যুরেন্সের টাকা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায় এক সৌদি ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের প্রতারণায়।
বৈধ শ্রমিক হিসেবে দাম্মাম রোড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল ওমর ফারুকের পরিবারের। এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ইন্স্যুরেন্সের টাকা পাওয়ার কথা ছিল মৃত্যুর পরপরই। কিন্তু ১৫ বছরেও তা দেয়নি জেনারেল অরগাইনেজশন অব সোস্যাল ইন্স্যুরেন্স (গোসি)।
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে অর্থ না পেয়ে অবশেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ফারুকের স্ত্রী শাহীনা ইয়াসমিন লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রয়াত ওমর ফারুকের ইন্স্যুরেন্সের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২২ হাজার সৌদি রিয়াল দাবি করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবগা গ্রামের বাসিন্দা বিধবা শাহীনা জানান, ন্যয্য প্রাপ্য দিচ্ছে না সৌদি ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। দিচ্ছি দিচ্ছি বলেই ১৫ বছর পার করেছে কোম্পানিটি। অথচ আমি সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না থেকে জীবন কাটাচ্ছি।
শাহীনা বলেন, স্বামীর উপার্জনের টাকা জমানোর সুযোগ হয়নি। যা টাকা আয় হয়েছে বড় দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে সেই টাকা শেষ হয়েছে। একমাত্র পুত্র সন্তান থাকার সময় স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তার পর থেকেই কষ্টের জীবন শুরু। আর এভাবেই চলছে ১৫ বছর।
শাহীনার লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ১০ এপ্রিল দাম্মাম সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যান ওমর ফারুক। বৈধ শ্রমিক হিসেব তিনি দাম্মাম রোড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করতেন। তার পাসপোর্ট নং ০৩৩৯৪০৪, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ নং, ১০৫৬৩/২০০১, দূতাবাস পত্র নং- এলডব্লিউ/এ-১২৮/২০০১। মৃত্যুর পর ওমর ফারুকের মরদেহ দেশে এনে দাফন করা হয়।
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ওমর ফারুকের জেনারেল অরগাইনেজশন অব সোস্যাল ইন্স্যুরেন্স-গোসি কোম্পানিতে ইন্স্যুরেন্স করা ছিল। যার সিলিয়াল নং ৮৩৬৩৬৫৪৪৫, ফাইল নং ৭-৬৬৮৫। এই ইন্স্যুরেন্সের বিপরীতে ওমর ফারুকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে ২২ হাজার সৌদি রিয়াল।
স্বামীর মৃত্যুর পর শাহীনা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠান সৌদি ওই কোম্পানির কাছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
লিখিত অভিযোগে শাহীনা বলেন, ২০১৪ সালে ইমেইলে গোসিতে অভিযোগ দায়ের করার পর জানানো হয়, মৃত ওমর ফারুকের পরিবারের নামে ৭টি চেকে ২২ হাজার রিয়াল দেয়া হয়েছে।
কোনো চেক কিংবা নগদ অর্থ পাওয়া যায়নি মর্মে আবারো অভিযোগ দায়ের করেন শাহীনা। অভিযোগের পর ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অভিযোগ তদন্ত করে এর সত্যতা খুঁজে পায়। গোসি থেকে শাহীনা ইয়াসমিনকে জানানো হয় ২২ হাজার রিয়ালের ৭টি চেক পাস হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলো ক্যাশ হয়নি। দ্রুত চেকগুলো পাঠানো হবে।
তবে অভিযোগের ২ বছর পার হলেও কোন চেক গোসি থেকে পাননি শাহীনা। পরে গত ২২ মার্চ সৌদী রাষ্ট্রদূতের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
কষ্টের অনুভূতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাহীন। জানান, দুই মেয়ে এক ছেলের সংসার তার। দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গর্ভের আট মাসের সন্তানটি এরই মধ্যে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে তার বাবাকেও দেখেনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর যখন তার লাশের অপেক্ষা করছি, সেই সময় কোল জুড়ে আসে শিশুপুত্র ওমর আরব।
শাহীনা বলেন, আমার স্বামীর কর্মস্থল থেকে কোন ক্ষতিপূরণ তো আসেইনি, উপরন্তু স্বামীর ইন্স্যুরেন্সের টাকাও পাচ্ছি না।
ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ২৩, ২০১৬।