শিক্ষা-সংস্কৃতি

১৩৭০ কোটি ব্যয়ে হচ্ছে চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ, উচ্ছ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর

 

দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রতীক্ষার পর চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদপুর শহর ও এর আশপাশের ৩০ দশমিক ১২ একর এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৭০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ১০টি আবাসিক ভবন তৈরি, ১১টি অনাবাসিক ভবন, লিফট, ১২ হাজার ৯২৭টি মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং তিনটি মোটর গাড়ি কেনা হবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর।’

এদিকে, চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ একনেকে অনুমোদন হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘চাঁদপুরে ডাকাতিয়ার তীরে মনোরম পরিবেশে আধুনিক সকল সুবিধাসম্পন্ন ১৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপনের জন্য গৃহীত প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হলো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল চাঁদপুর স্টেডিয়ামের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে পাশে দেখে জনতাকে বলেছিলেন, আপনাদের এমপি একজন ডাক্তার। সে চেয়েছে। আমি তাই আপনাদের জন্য একটা মেডিক্যাল কলেজ দিয়ে গেলাম। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ এই প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। জয় বাংলা।’

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা পাবে নিজস্ব ক্যাম্পাস। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। এজন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ায় অধ্যক্ষ ড. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য বড় আনন্দের সংবাদ। এ পর্যন্ত সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজটি সদর হাসপাতালের চতুর্থ তলায় রোগীর জন্য বানানো কয়েকটা ওয়ার্ডকে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে ক্লাস করে যাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে পাঁচটি সেশনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কীভাবে ক্লাস করছে, তা তো সবাই দেখেছেন। কার্যক্রম এতদূর আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকে সহযোগিতা করেছেন। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’

উল্লেখ্য, চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা শহরে অবস্থিত ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে কলেজের যাত্রা শুরু হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য চাঁদপুর শহরের গাছতলা মৌজায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে কর্তৃপক্ষ। জমির মধ্যে ২৮ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন। বাকি ২ একর সরকারি সম্পত্তি।

গত কয়েক বছর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে চিঠি চালাচালি হয়। কিন্তু মহামারি করোনা ও নানা কারণে প্রকল্পটি একনেক পর্যন্ত যেতে সময় গড়ায়। সবশেষ মঙ্গলবার দেশের নানা স্থানের ১৭টি প্রকল্পের সঙ্গে এটি পাস হয়।