১০ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধে আলটিমেটাম
ঢাকা জার্নাল: অবিলম্বে সোয়ান গার্মেন্টের তিন মাসের বকেয়া মজুরী পরিশোধ এবং সকল গার্মেন্ট কারখানায় এক মাসের মূল মজুরির সমান বোনাসের দাবিতে সমাবেশ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে সরকারি ঘোষণা মেনে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে সোয়ান কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। অন্যথায় দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দান করলে রাজপথে অবস্থান থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সমাবেশে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির দাবি আইনসঙ্গত, আইন অনুযায়ী কারখানার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে হলেও শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। যারা শ্রমিকদের পাওনা দিচ্ছে না তারা আইন লঙ্ঘন করছে। তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্যেশ্য করে বলেন, শ্রমিকদের দমন-পীড়ন, ভয়-ভীতি না দেখিয়ে তাদের ধরুণ। তিনি আসন্ন ঈদের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেখানে শ্রমিকদের বোনাসের দাবি করার কথা সেখানে আজ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে তিন মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে। তিনি সরকার এবং মালিক পক্ষের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে বলেন আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শ্রমিকদের দাবি আদায় করতে হবে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরি সভাপতি সাদিকুর রহমান শামীমের সভাপত্বিত্তে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা মাহাবুব আলম, কাজী রুহুল আমীন, জিয়াউল কবীর খোকন, ইকবাল হোসেন, কেএম মিন্টু, এমএ শাহীন, মঞ্জুর মঈন, নুরুল ইসলাম, শেখ ফরিদ, মিনারা বেগম, হযরত আলী প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, গত ১০ এপ্রিল ২০১৫ থেকে বেআইনীভাবে বিনা নোটিশে সোয়ান গ্রুপ এর সোয়ান গার্মেন্টস প্রা. লি. ও সোয়ান জিনস লি. নামক কারখানা দুটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ১৩০০-এর অধিক শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারখানা বন্ধের কয়েকদিন পরে মালিক মারা যাওয়ার ফলে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও প্রচলিত শ্রম আইন অনুসারে ইতিমধ্যেই বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করা সম্ভব ছিল। সোয়ান গার্মেন্টের শ্রমিকরা গত এপ্রিল মাস থেকে বকেয়া মজুরি ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কয়েক দফা শ্রমমন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএ ঘেরাও করেছি। সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে ধর্ণা দিয়েছি। সোয়ানের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান না করে উল্টো উদ্দেশ্যমূলকভাবে গত ৩০ জুন সোয়ানের শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে ইসলামী ব্যাংক। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এমতাবস্থায় ঈদের পূর্বেই এই অনাহারি শ্রমিকদের পাওনা আদায় করতে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় শ্রমিকের পাওনা আদায়ে বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়।
সমাবেশ থেকে দেশের সকল গার্মেন্ট শ্রমিক, শ্রমজীবি মেহনতি মানুষ ও বিবেকবানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম অগ্রসর করার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে অঝোড় উপেক্ষা করে একটি মিছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হলে কদমফুল ফোয়ারার নিকট বিপুল সংখ্যক পুলিশ জলকামান ও রায়োটকারসহ মিছিলে বাধা প্রদান করে। পুলিশি বাধা মোকাবেলা করে মিছিলটি দোয়েল চত্বর পর্যন্ত অগ্রসর হলে পুনরায় পুলিশি বাধায় শ্রমিকরা রাজপথে অবস্থান গ্রহণ করে। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এড্যভোকেট মন্টু ঘোষ, কার্যকরি সভাপতি সাদেকুর রহমান শামীম, কাজী রুহুল আমীন, জয়নাল আবেদীন, শেখ ফরিদ, জাকির হোসেন, মোর্শেদা বেগম এবং মাকসুদা বেগম।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ৯, ২০১৫।