সব সংবাদস্পটলাইট

১০০ স্ত্রী আর ৫০০ সন্তানের সংসার যে রাজার-সৃষ্টি ঘটক

04বহুবিবাহের প্রচলন আছে কিছু কিছু দেশে। তাই বলে বিয়ের যুক্তিসংগত সংখ্যাটা কী হতে পারে? এ নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। সে বিতর্কে যাব না। কিন্তু কারো স্ত্রীর সংখ্যা যদি ১০০ হয়, তাহলে তা কি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়! অবাক হওয়ারই কথা। হ্যাঁ, কোনো রূপকথা নয়। বলছি, ক্যামেরুনের এক রাজার গল্প, যার সংসারে স্ত্রী ও সন্তানের অভাব নেই।

আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুনের একটি অঞ্চল বাফুট। বাফুটের রাজাদের বলা হয় ফন। বর্তমান রাজার নাম দ্বিতীয় আবুম্বি, যিনি বাফুটের ১১তম রাজা। বাস্তবে ও রূপকথায় রাজ্য, রাজা-রানির গল্প তো কম শোনা হয়নি। রূপকথার রাজাদের স্ত্রী ও সন্তানের সংখ্যা গল্পে গল্পে বেড়েই যায়। এবার শুনুন বাফুটের রাজা দ্বিতীয় আবুম্বির রাজসংসারের গল্প, যেখানে বাস্তবেই ঘটে চলেছে অনেক কিছু।

রাজা আবুম্বির স্ত্রীর সংখ্যা মোটামুটি ১০০-এর কোঠাতেই। ২১ শতকের সভ্যতায় স্ত্রী গ্রহণের এ ধরনের ঐতিহ্য বহাল আছে, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। বাফুটের রাজবংশের রেওয়াজ অনুযায়ী, এক রাজার মৃত্যুর পর যিনি রাজা হবেন তাকেই পূর্ববর্তী রাজার সব স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ করতে হবে। পূর্বের রাজার স্ত্রীদের নতুন রাজা স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করবেন। আগের রাজার সন্তানদের বাবাও হবেন নতুন রাজা। ঐতিহ্য হিসেবে এমনটিই চলে আসছে।

রাজা আবুম্বির কয়েক স্ত্রী দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন
রাজা আবুম্বির বাবা, যিনি রাজ্যের প্রাক্তন রাজা ছিলেন, ১৯৬৮ সালে মারা যাওয়ার পর আবুম্বিকেই তার বাবার ৭২ জন স্ত্রীকে গ্রহণ করে তাদের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হয়। এতে করে তার নিজস্ব স্ত্রীসহ এখন মোট স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০-তে।

রাজা আবুম্বির স্ত্রীর সংখ্যাটা তো জানা গেল। এবার দেখা যাক তার সন্তান সংখ্যা কত। ১০০ স্ত্রীর সন্তান সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। এ শুধু বাফুটের রাজার পক্ষে সম্ভব, তাই নয়কি?

বাফুটের রাজপরিবারে নিয়ম হচ্ছে- রাজ্যের জ্যেষ্ঠ রানিরা নতুন রানিদের সমস্ত রীতি-রেওয়াজ শিখিয়ে দেবেন। যেহেতু রাজ্যের নতুন রাজা অর্থাৎ তাদের বর্তমান স্বামী পূর্বে রাজপুত্র ছিলেন, তাই রাজাকে পরম্পরার শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও জ্যেষ্ঠ রানিদের ওপর ন্যস্ত থাকে।

বাফুটের রাজবাড়ি
‘টাইটেল রয়ালস’ অর্থাৎ রাজার প্রকৃত মা বা বোন রাজার সহায়িকা এবং প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে থাকেন। রাজার বড় ভাইকে মুমা এবং ছোট ভাইকে নিমফর বলা হয়, যারা রাজ্য পরিচালনায় ফনকে সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু ফনের হঠাৎ মৃত্যু বা পদত্যাগে তার ভাইয়েরা রাজ্য শাসনের ক্ষমতা পান না।

রাজা আবুম্বির তৃতীয় রানি কনস্ট্যান্সের কথায়, ‘প্রতিটি সফল পুরুষের সফলতার পেছনে থাকে একজন সফল এবং একনিষ্ঠ নারীর অবদান। আমাদের ঐতিহ্য হলো, কেউ যখন রাজা হন, তখন তার বড় স্ত্রীরা সব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কনিষ্ঠ স্ত্রীদের শিখিয়ে দেন এবং নতুন রাজাকে তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করেন। কেননা তিনি আগে রাজা ছিলেন না, ছিলেন রাজপুত্র।’

বিশ্রামে রাজ আবুম্বি
বলে রাখা ভালো, বাফুট রাজ্যের রাজার প্রায় সব স্ত্রী শিক্ষিত, মিষ্টভাষী এবং একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারদর্শী।

এই সুযোগে রাজা আবুম্বির রাজকার্য সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। রাজার মতে, তার রাজ্যের জনগণের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন করা ও রক্ষার দায়িত্ব তার। আর এ জন্য তার স্ত্রীরা তাকে সহযোগিতা করেন।

এসবের বাইরেও একজন ফন অর্থাৎ রাজার বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের সব ধরনের বিচারকাজ তার নামে পরিচালিত হয়। কেননা, তিনিই সেখানকার চূড়ান্ত আদালত এবং তারই সিদ্ধান্তে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া বা মওকুফ করা হয়।

এ ছাড়া রাজাই এই রাজ্যের প্রধান যাজক। তিনি পূর্বপুরুষদের শান্তি প্রার্থনা করে বলি দেন। ক্যামেরুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘আবিন-ই-মফর’-এ সবার মধ্যমণি হিসেবে সব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি।

ক্যামেরুনের বাফুট রাজ্যটি ঐতিহ্যবাহী এবং একই সঙ্গে আধুনিক শাসনব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া বাফুট রাজ্যের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো- রাজা দ্বিতীয় আবুম্বির রাজবাড়ি। রাজপ্রাসাদ বলতে যেমন বড় বড় অট্টালিকা বুঝি আমরা, আবুম্বির রাজবাড়ি কিন্তু তা নয়। তার এই রাজবাড়িকে ‘টহ’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয়েছে কাঠ এবং পুষ্পলতা দিয়ে। ২০০৬ সালে এটিকে ক্যামেরুনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পর্যটন এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

বাফুটের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘আবিন-ই-মফর’-এ জমায়েত
রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে একটি ‘পবিত্র বন’। উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনের বাফুট প্রাসাদটি ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই রাজ্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। বাফুটের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার এবং প্রথাগত অনুষ্ঠান সবকিছুই এটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। রাজবাড়িতে ৫০টির বেশি ঘর রয়েছে। এগুলো বাফুটের ফন ও তার স্ত্রীদের বসবাস এবং রাজার দরবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাজবাড়িতে অবস্থিত তালপাতায় ঘেরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি উপাসনালয়টি ঐতিহ্যবাহী ভক্তিমূলক স্থাপনার দারুণ এক নিদর্শন। এখানে বাফুটের প্রথম তিন রাজা ফিরলো, নেবাসি শু ও আম্বুবির সমাধি রয়েছে।

বাফুট সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত বিখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী জেরাল্ড ডুরেল-এর বাফুট ভ্রমণ নিয়ে ‘দ্য বাফুট বেগলস’ এবং ‘অ্যা জু ইন মাই লাগেজ’ শীর্ষক দুটি লেখার মাধ্যমে। তিনি ১৯৪৯ ও ১৯৫৭ সালে দুটি প্রাণীর সন্ধানে বাফুটে আসেন। তখন তিনি ‘টু বাফুট অ্যান্ড বেগল’ শিরোনামে একটি টিভি সিরিজ নির্মাণ করেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.