শীর্ষ সংবাদ

হেফাজতের তাণ্ডবে নিহত তিন

Hafajat-bg120130505075547ঢাকা জার্নাল: হেফাজত ইসলামের সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছা‍ড়া বহু আহত হয়েছে। রোববার দুপুর ২টার পর থেকে পুরানা পল্টন মোড়ে সংঘর্ষের কবলে পড়ে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ওরফে বুলেটের (২৮) মৃত্যু হয়। তিনি হানিফ পরিবহনের হেলপার। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ‍রাখা আছে।

ওই গাড়ির চালক জুয়েল জানান, কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ গত শুক্রবার গাড়িটি রিক্যুইজিশনে নেয়। জুয়েল আরো বলেন, “নিহত বুলেট থাকতেন রাজধানীর মানিকনগরে। রোববার একটি কাজে আমরা পল্টন গিয়েছিলাম। হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে বুলেটকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখি। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কর্তব্যরত সার্জন হরিদাস সাহা প্রতাপ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

এছাড়া বায়তুল মোকাররম মিনার গেইটে গণধোলাইয়ে যুবকের মৃত্যু ঘটেছে। পথচারী বাহক মো. সজল বলেন, “সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেখানে এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখি। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। পড়ে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

মৃত ব্যক্তির মোবাইল থেকে কল তার পরিচিতদের কাছে কল করে জানা যায়, তার নাম নাহিদ (২৬)। পিতার নাম দেলোয়ার সিকদার। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা ২৭৪ জয়কালি মন্দির, ওয়ারি। তিনি দোকান কর্মচারি ছিলেন।

এদিকে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশস্থল থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘিরে পল্টন, গুলিস্তান, বিজয়নগর ও কাকরাইল এলাকা গুলি-বোমা-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার‌্যালয় মুক্তি ভবনে হামলা চালানোর পাশাপাশি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওই এলাকার ফুটপাতের দোকানপাট।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই হামলা-সংঘর্ষের পেছনে জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে বলে তাদের ধারণা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরও একই অভিযোগ করেছেন।

ব্লগারদের শাস্তি ও নারীনীতি বাতিলসহ ‘বিতর্কিত’ ১৩ দফা দাবিতে সরকারকে চূড়ান্ত চাপ দিতে হেফাজত ইসলামীর অবরোধে ভোরেই দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা।

রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচির পর শাপলা চত্বরের সমাবেশে অংশ নিতে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, উত্তরা, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মতিঝিলের দিকে আসতে শুরু করেন হেফাজতকর্মীরা।

বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে আসা হেফাজতকর্মীদের একটি দল বায়তুল মোকাররম ইউসিবিএল ক্রসিংয়ে পুলিশের বেরিকেড ডিঙিয়ে এগোতে চাইলে শুরু হয় সংঘর্ষ।

বৃষ্টির মতো ঢিলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লেও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটক ও বিজয়নগরেও সংষর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে বেলা পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালায়ের সামনে ১০ থেকে ১৫টি হাতবোমা বিস্ফোরণে পরে সেখানেও ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বিস্ফোরণের পরপরই কয়েকজনকে ভ্যানে করে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

শাহাদত হোসেন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলাকারীদের হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রও দেখছেন তিনি।

হামলাকারীদের মধ্যে থেকে ‘নারায়ে তাকবির’ শ্লোগান শুনেছেন।

হামলাকারীরা এ সময় অন্তত ১৫টি গাড়িও ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে স্টেডিয়াম, রাজউক ভবন, গুলিস্তান ও গোলাপ শাহর মাজার এলাকাতেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও।

এদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যেই পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনে হামলা চালিয়ে ফটক ভেঙে নিচতলার দোকানগুলোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঢিল ছুড়ে ভবনের পাঁচ তলা পর্যন্ত সামনের কাচগুলোও ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা।

পুলিশ পল্টন মোড় থেকে পুলিশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে অবস্থান নেয়া হামলাকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকলে উল্টো দিক থেকে চলে ঢিল বৃষ্টি। ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা আগুন নেভাতে সেখানে উপস্থিত হলেও সংঘর্ষের কারণে সিপিবি অফিসের সামনে পৌঁছাতে তাদের বেগ পেতে হয় বলে ফায়ার অফিসার মো. মহসিন জানান।

হামলাকারীরা পূর্ব বিজয়নগরে ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলে অগ্নিদগ্ধ হন কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম (৩৫) । তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নয়া পল্টন ও কাকরাইল এলাকাতেও। পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ঠেকাতে টিন হাতে রাস্তায় আড়াল নিয়ে পাল্টা ঢিল ছুড়তে দেখা যায় হামলাকারীদের।

দফায় দফায় সংঘর্ষে নয়া পল্টন, পল্টন, বিজয়নগর, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররমের আশেপাশের এলাকার রাস্তা রাশি রাশি ইট ও কাচের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধোঁয়া আর টিয়ার গ্যাসে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে আসে।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের উল্টো দিকে ফুটপাতের দোকানগুলোও পুড়িয়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় দূর থেকে আগুনের লাল আভা দেখা যায় ওই এলাকায়।

এছাড়া মালিবাগ এলাকায় কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয় বলে পুলিশ পরিদর্শক জানান।

প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলাকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, “হেফাজতে ইসলামের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যারা বিশৃঙ্খলা করছে তারা তাদের কর্মী নয়। হেফাজত ইসলামের মোড়কে জামায়াত-শিবির কর্মীরাই এটা করেছে।”

মন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন সচিবালয়ের পাশেই টিয়ারশেল ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝ পাওয়া যাচ্ছিল সচিবালয়ের ভেতর থেকেও।

হেফাজতকে শুরুতে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও পরে কেন দেয়া হলো জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার কথা বললেও তারা হিংসাত্মক কাজ করছে।”

সিপিবি অফিসে হামলার ঘটনায় দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত আমাদের সংগঠনের প্রতি স্বাধীনতাবিরোধীদের আক্রোশ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”

“তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র তারা আবার প্রকাশ করে দিল’, বলেন তিনি।

ঢাকা জার্নাল, মে ০৫, ২০১৩

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.