Lead

হৃদয় মণ্ডলের ঘটনায় আইনগত বিষয়টি দেখা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের কারাগারে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, আইনগত বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আমি মনে করি, পুরো বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক বিজ্ঞান পড়াবেন। আমরা তো বিজ্ঞানবিবর্জিত হতে পারি না ।

শনিবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে স্কাউটস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দেশের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে একজন শিক্ষককে হয়রানির মধ্যে পড়া উচিত নয়। একজন শিক্ষকের সঙ্গে কেনো এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। বিজ্ঞান শিক্ষা বাদ দিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।’

ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সবার জীবনে ধর্ম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ধর্মশিক্ষার যদি ক্লাস হয় সেখানে শিক্ষক ধর্ম শেখাবেন। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সংঘর্ষের জায়গা নেই। কোথাও যদি সংঘর্ষ হয় সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা…। আসলে আমি সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই। তাই আমি সেটি নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষককে তার বিষয়ে পড়ানোর জন্য নিশ্চয়ই হয়রানির মধ্যে পড়া উচিত নয়। তিনি কী বলেছেন, কীভাবে বলেছেন- এ বিষয়গুলো তদন্ত হতে পারে। কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, সেগুলো তদন্ত হতে পারে। কিন্তু পুরো ঘটনাটি আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই দুঃখজনক।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমার এটাও মনে হচ্ছে যে আমাদের আশপাশে অনেকগুলো দেশে অনেক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। এই শান্তিটা হয়তো কারও কারও খুব পছন্দ হচ্ছে না। এখানে আমি এখন দেখছি প্রায়শই নানাভাবে নানা কিছু উস্‌কে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা চলছে। ‌এটি সেই অপচেষ্টার অংশ কিনা আমি জানি না। তবে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে শিক্ষা আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গুরুত্বপূর্ণ।

ধর্মীয় সম্প্রপ্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে তা বজায় রাখা আমাদের জন্য, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার। একইভাবে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। কারণ আমাদের শিক্ষায় এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষককে সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার দরকার রয়েছে। কোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। কোনও ধরনের কোনো অভিযোগ আসতেই পারে। অভিযোগ এলে তা তদন্ত হবে। কিন্তু কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যা করণীয়, আমরা সেই চেষ্টাটি করব। সবাইকে বলব— আমাদের বোধ হয় ধৈর্য্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। যেকোনো ছুতোয় আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলো নষ্ট হওয়ার মতো কোনও কিছু করা বা উস্‌কে দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় বোধ থেকে আমি আমার মতো করে ধর্ম পালন করব। যে যার ধর্ম পালন করবে বিশ্বাস নিয়ে, সেটি তার অধিকার। একইসঙ্গে আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার দিকটিও আমাদের দেখতে হবে।’

প্রসঙ্গত, মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্মীয় অবমানার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।