হিন্দুবাড়ি রক্ষার দায় ।। সাংবাদিক সাখাওয়াতের পরিবারের প্রতি বর্বরতা
ঢাকা জার্নাল : দেশের জনপ্রিয় অনলাইন প্রত্রিকা বাংলানিউজের সাংবাদিক সাখাওয়াত আল আমিনের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে ভাংচুর করেছে এমন খবর যতটা দুঃখের, ততটাই আতঙ্কের।
শুক্রবার (০১ এপ্রিল) দুপুর বেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি সেখানেই শেষ নয়। সাংবাদিক সাখাওয়াত আল আমিনের মাকে পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গেছে থানায়।
তাতেও পুলিশের নির্মমতা থামেনি, মামলা করেছে নিরীহ একজন নারীর বিরুদ্ধে। আর এর পরেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি গ্রামের কেউ।পুলিশ আর প্রতিপক্ষের ভয়ে যে যারা মতো নিজেকে নিরাপদ রেখেছেন।
সাংবাদিক সাখাওয়াত আল আমিনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর উপজেলার বর্নি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি জায়গা সংক্রান্ত্র বিরোধের জের হিসেবে প্রতিপক্ষের হয়ে পুলিশ এমন ভুমিকা নিয়েছ।
গত ১০ জানুয়ারিতে সাখাওয়াত গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।বাম পা পিটিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। গ্রামের কোনো খবর তার জানা চিলনা বলেই এই সুযোগ নিয়েছে প্রতিপক্ষ।
সাখাওয়াত আল আমিন জানান, ২০০৮ সালে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তির পর থেকে বাড়ি যান না ঈদ অথবা কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া। ২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন সাখাওয়ান আল আমিন। বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্রয়নরত অবস্থায় বাংলানিউজে সাংবাদিকতা করছেন। দীর্ঘকাল পর বাড়ি যাওয়ার পরই প্রতিপক্ষের নির্যযাতনের শিকার হন তিনি।
সাখাওয়াত আরো জানান, শুক্রবারের ঘটনার পর মোকসেদপুর থানা পুলিশ তার ঢাকায় থাকা ভাইয়ের নামে মামলা রেকর্ড করেছে। হামলার ভয়ে আমার একমাত্র বোনও বাড়ি থাকতে পারছে না। পুলিশ গ্রামে থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী ও গোত্রের প্রায় বিশটি বাড়ি থেকে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে লুটে নেওয়া হয়েছে ঘরের জিনিসপত্র।
সাখাওয়াত আমিন বলেন, ভাঙচুর করে ঘরের চালার টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে।হামলা ও লুটপাটের সময় আমার বড় ভাইকে ২৯টি কোপ, আমাকে হত্যার চেষ্টা বা সর্বশেষ সাজানো খুনের মামলায় আমার পরিবারসহ ৮৪ জনকে ফাঁসানোর এই পরিস্থিতি হঠাৎই ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয়। প্রায় ১১ বছর যাবত চলে আসা আমাদের পরিবারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।
যে কারণে হামলা লুটপাট
ঘটনার সুত্রপাত একটি সাত বিঘা (১বিঘা=৫৩শতক) আয়তনের বিশাল একটি হিন্দু বাড়ি নিয়ে। গ্রামের একমাত্র হিন্দু বাড়িটি ছিল গ্রাম্য ডাক্তার পঞ্চনন বর্মন নামে। ডাক্তার মারা গেছেন অনেক আগেই। সেই বাড়িতে থাকতেন ডাক্তারের মেয়ে এবং বউ।কোন পুরুষ সদস্য ছিল না সেই বাড়িতে। মেয়েটিও ছিল চিরকুমারী। সেখানে পাহারাদার হিসেবে থাকতো সাখাওয়াত আল আমিনের চাচা তোরাব মোল্লা।তোরাব মোল্লা মারা যাওয়ার পর তারই এক আপন ছোট ভাই থাকতেন সেই বাড়িতে।
২০০৫ সালের মাঝামাঝি ডাক্তারের বৃদ্ধা বউ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিতায় যাওয়ার আগেই সেই বাড়ি দখল করে নেয় ১১ দল খ্যাত গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালীরা। মেয়েটিকে কিছুদিন জিম্মি করে রেখে পরে তাকে ভারত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন কথা প্রচলিত আছে এলাকায়।
সাখাওয়াত জানান, গ্রামের মধ্যে আমাদের মোল্লা গোত্র সবচেয়ে বড়। তাই আমাদের কেউ যাতে সে বাড়ির দিকে হাত না বাড়ায় সে জন্য দখল করার সঙ্গেই সঙ্গেই একাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় সবার নামে। আমি এবং আমার বাবা ছাড়া কোন পুরুষ সদস্যই তখন বাড়িতে থাকতো না। আমি তখন নাইনে পড়ি। আমার বড় দুই ভাই ঢাকায় চাকরি করেন। তবুও মামলার প্রধান আসামীকরা হয় আমার বড় ভাইকে।
তিনি আরো জানান, ওই বাড়িটি দখল করার জন্য অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। এর অংশ হিসেবে গ্রামের ছোট ছোট ১১টি গোত্রকে লোভ দেখিয়ে মোল্লাদের বিরুদ্ধে এককাট্টা করাপ হয়। এ দলের নেতৃত্বে আছেন, ইয়াদ আলী, বতু শেখ,রিপন মোল্লা, সেকেন্দার, হায়তার মাতুব্বর, জামাল শেখসহ আরো কয়েকজন। দখল করার সেই বাড়িটিও ভাগ করা হয় ১১ ভাগেই। যা প্রকাশ পায় ডাক্তারের বউ মরার দিন।এসবের কিছুই টের পায়নি আমাদের গোত্রের কেউ।
দখল করার কয়েকদিনের মধ্যেই উস্কানি দিয়ে তুমুল গণ্ডগোল বাধিয়ে দেয় ১১ দল। মোল্লারা তখন আত্মরক্ষার্থে পিছু হটলে।হামলা মামলা দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে দিয়ে জবরদখলী জমি ভোগ নিশ্চিত করে ১১ দল। সেখানে বাড়িও তুলেছে কয়েকজন।কয়েক বছর নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে নি আমাদের গোত্রের কেউ। বাড়ি আসার খবর পেলেই দলবল নিয়ে তার ওপর হামলা চালায় ১১ দলের লোকজন। এরকমভাবে প্রায় ১৫ জনকে হাত পা ভেঙ্গে দেয় তারা।
এই ১১ দলের মধ্যে আমার বাবার ফুফাতে ভাইরাও ছিল। তারা আমাদের সম্পত্তিতে তাদের মায়ের অংশ পেতো। আমাদের পিছু হঠার সুযোগ নিয়ে আমাদের সমস্ত ফসলী জমির দখল নিয়ে নেয় তারা। যা তাদের প্রাপ্য অংশের প্রায় দ্বিগুণ (১০ বিঘার মত)। যার ফলে আমার কৃষক বাবা প্রায় সর্বসান্ত হয়ে যায়।এভাবেই চলছে দীর্ঘদিন। আমার বড়ভাইয়ের নামে এ পর্যন্ত ডজনখানেক মামলা দেওয়া হয়েছে।
দুঃখিত মা, তোমার পাশে দাঁড়াতে পারলাম না
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ০৩, ২০১১৬।