হলি আর্টিজান হামলার আট বছর : ‘জঙ্গি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে’

জুলাই ১, ২০২৪

ঢাকা জার্নাল রিপোর্ট: 

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালায় নব্য জেএমবি। এতে দেশবিদেশিসহ প্রাণ হারায় ২২ জন। তাদের মধ্যে দুই জন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এই হামলার ঘটনায় গ্রেফতার সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্র্যাইব্যুনাল। পরে উচ্চ আদালত তাদের আমৃত্যু কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দেশের ভয়াবহ হলি আর্টিজান হামলার আট বছর আজ। ঐ হামলার পর একের পর এক অভিযানে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি পুরো নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে। 

হলি আর্টিজান মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নৃশংস এই জঙ্গি হামলার মামলায় ট্রাইব্যুনাল সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে সব আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। আসামিদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, এখনো হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। রায় পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্টের যে বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে, সেখানে আরও অনেক ডেথ রেফারেন্স মামলা রয়েছে। সেগুলোর ওপর রায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হলি আর্টিজান মামলার ট্রাইব্যুনালের রায়টি বড় ভলিউমের। ঐ রায় বিচার-বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে সময় লাগছে আদালতের। এজন্য দশ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো রায় পাইনি। আমি মনে করি রায় পেতে এই সময় লাগাটা স্বাভাবিক।’

বিশ্বের ১৬৩টি দেশের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করে থাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা— ‘গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স (জিটিআই)’। যেখানে এক থেকে দুই বছর পরপর বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপট, কোন দেশ কতটা সন্ত্রাসপ্রবণ সেসব নিয়ে র‌্যাংকিং তৈরি করে থাকে জিটিআই। রবিবার জিটিআইয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সে সব দেশ মিলে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩২তম। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ, তাদের র‌্যাংকিং নাম্বার ৩০তম। এমনকি যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখানে ৩১তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জিটিআইয়ের শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তানের নাম। এছাড়াও পাকিস্তান ৪ নাম্বারে ও ভারত ১৪-তে। এসব হিসাবেও বাংলাদেশের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী অগ্রগতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেছেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। যারা গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে, র‌্যাবের অভিযানে তারা গ্রেফতার হচ্ছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি দল বান্দরবানের গহিন পাহাড়ি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মাধ্যমে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে র‌্যাবের তৎপরতায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫৫ জনকে গ্রেফতার করে। অনেকে ভুল পথে যাওয়ায় তারা আত্মসমর্পণ করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সব বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার হুমকি ও আশঙ্কা এখন নেই। হলি আর্টিজান হামলার পর সব জঙ্গির সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সের র‌্যাকিংয়েও বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত দেশের চেয়ে নিরাপদ অবস্থানে আছে। সংঘবদ্ধ হয়ে জঙ্গিদের হামলার কোনো সুযোগ নেই।