হজ ট্রলিব্যাগ সরবরাহের দায়িত্ব হারাচ্ছে হাব
ঢাকা জার্নাল : হজ ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবাহের দায়িত্ব হারাতে বসেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করায় ত্রিমূখী চাপেও পড়েছেন সংগঠনের নেতারা।
মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটি এবং হাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে একদিকে মন্ত্রণালয় মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে, অন্যদিকে সংসদীয় কমিটি হাবের হজ ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবরাহের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিতে সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর অনুকুলে হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে হাবকে চিঠি দিয়েছেন হাবের সাবেক দুই নেতা।
হাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বুধবার (১৮ মে) হাবের বর্তমান সভাপতি ইব্রাহিম বাহারের কাছে লিখিত চিঠি দিয়েট্রলিব্যাগের জন্য হজযাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা এজেন্সিগুলোর অনুকূলে ফেরত চেয়েছেন।
হজযাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য এই চিঠি দিয়েছেন হাবের সাবেক দুই নেতা। চিঠিতে তারা বলেছেন, হজ ট্রলিব্যাগের টাকা নিয়ে কাউকে কাউকে ব্যবসা করাচ্ছে হাব। ২০১৫ সালের অতিরিক্ত হজযাত্রীর ট্রলিব্যাগের টাকার হিসেবে নিকেশ এখনও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ট্রলিব্যাগ নিয়ে নানা রকম নির্যাতনের কারণে ২০১৩ সালের হাব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক এজেন্সিরই হজ ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক হজযাত্রীদের টাকা প্রত্যেকটি এজেন্সির অনুকুলে ফেরত দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয় চিঠিতে।
নিয়ম অনুযায়ী হজের টাকা জমা নেওয়ার সময় হজ ট্রলিব্যাগেরজন্য হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয় এজেন্সীগুলো। ব্যাগ সররাহের জন্য এই টাকা হাবের একাউন্টে জমা দেয় প্রত্যেক এজেন্সি। জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালা অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে মানসম্মত ব্যাগ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করার কথা হবের। কিন্তু অভিযোগ মতে, বিগত তিন বছর ধরেই নিম্নমানের ব্যাগ সরবরাহ করে হজযাত্রীদের টাকা লোপাট করছে সংগঠনটি।
এসব অভিযোগ থাকার পরেও এ বছর ট্রলিব্যাগ সরবাহ প্রত্রিকায় অস্বচ্ছতার প্রমান রেখেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হাব। হাবের এই সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি সংশোধনসহ পুণরায় প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাব তা না করে, নিজেদের পছন্দের পার্টিকে ট্রলিব্যাগ সরবরাহের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। নীতিমলার দোহাই দিয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করেই ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবাহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে।
এ অবস্থায় দুর্নীতি ঠেকাতে যুগ্মসচিব জাকির আহমেদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।হাবের টুলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবরাহ প্রক্রিয়া এবং ব্যাগের মান যাচাই করে মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আব্দুল জলিল বলেন, মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে অনিয়ম ঠেকাতে। যদি এবারও নিম্নমানের ব্যাগ সরবরাহ করেহাব, তবে প্রয়োজনে নীতিমালা সংশোধন করে হাবকে এই দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে।
সর্বশেষ হাবের অনিয়ম-দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণলয় সংক্রান্ত্র সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। গত বুধবার (১৮ মে) সংসদীয় কমিটি হজ ও ওমরাহ নীতিমালার বিধিবিধান বাতিল করে ট্রলিব্যাগের টাকা হাবের একাউন্টে না দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। এমনকি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন না করে হাব যদি কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে চায় তাহলে তাও বাতিল করার সুপারিশ করে কমিটি।
হাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে হজ ট্রলিব্যাগ সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি শুরু হয়। ২০১৪ সালেহাবের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠে। ওই বছর সরবরাহ করা ট্রলিব্যাগের হাতল খুলে গেলে সৌদি আরবে অসংখ্য হাজি ভোগান্তিতে পড়েন, বিক্ষোভও করেন। তা নিয়ে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ব্যাগ সরবরাহে অনিয়মও খুঁজে পায়। এ ঘটনায় সরকারের নীতি নির্ধারকরাও ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে হাজীদের ব্যাগ সরবরাহের জন্য ধর্মমন্ত্রী ও সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয় সরকারের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে।
ঢাকা জার্নাল, মে ২১, ২০১৬