Lead

স্যাংশন দেয়া দেশ থেকে কিছু কিনব না: প্রধানমন্ত্রী

যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন দেবে, সেসব দেশ থেকে কোনো পণ্য কেনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে দুটি দেশ থেকে পণ্য না কেনার বিষয়ে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েকে ক্রস করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৫ মে) বিকাল ৪টায় গণভবনে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে প্রথমে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। পরে তার সফর নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেই বিদেশ থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেসব দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে পণ্য কেনা হবে না বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। নতুন করে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে কি কারণে স্যাংশন দিল? যাদেরকে দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদেরকে দিয়ে ..যখন সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদের জর্জরিত, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত; সে সময়, আমাদের সময় তো একটা ঘটনা ঘটেছে হোলি আর্টিজান। হ্যাঁ, অনেকেই বলেছে, এটা বাংলাদেশ একা সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের তো ২৪ ঘণ্টাও সময় লাগে নাই। তার মধ্যেই আমরা সেখানে উদ্ধার করলাম, জীবিত উদ্ধার করলাম।’

তিনি বলেন, ‘যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর আঘাত হানতে পেরেছি এবং তারপর থেকে বাংলাদেশে আর এমন ঘটনা ঘটতে পারেনি। কেননা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থা, তাদের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি, তারা এতো ভালোভাবে করেছে যে এমন আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি।’

এতো কিছুর পরও কেন স্যাংশন এমন প্রশ্ন করেন তিনি। বলেন, ‘এর পরের স্যাংশনটা কিসের জন্য? সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আমি এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্থ মন্ত্রণালয়কে ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি আমরা যে বিদেশ থেকে জিনিস ক্রয় করি, সেখানে আমাদের একটা ক্রস থাকবে; যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কোনোকিছু কেনাকাটা করব না। পরিষ্কার কথা। এতে সংকট আর ভয়ের কী আছে?’

বাংলাদেশ কারও ওপর নির্ভরশীল নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কারও ওপর এরকম নির্ভরশীল না এখন। যেটা নিয়ে সমস্যা হয়, আমরা উৎপাদন করে সমস্যা সমাধান করতে পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেশের মানুষতো নেমে গেছে, তারা যে যার যেখানে জমি আছে সেখানে চাষ করছে। বিশ্বব্যাপী যেখানে এতো মুদ্রস্ফীতি, যেখানে কে কতটুকু খাবার কিনবে তা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে উন্নত দেশে। উন্নত দেশে নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে এক লিটারের বেশি তেল কেনা যাবে না। টমেটো কেনা যাবে না, ৬টার বেশি ডিম কেনা যাবে না, এতোটুকু মাংস কেনা যাবে না। সূর্যমুখী তেল যারা খায়, অলিভ ওয়েল এতটুকুর বেশি কেনা যাবে না। সুপারমার্কেটগুলো খালি। তবে যারা ধনী তাদের অবস্থা ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘কথা নাই বার্তা নাই তারা স্যাংশন দেবে, স্যাংশনের ভয় দেখাবে আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব, কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দিয়েছিল, আমরা সেটাও পার করে বিজয় অর্জন করেছি। এ কথা ভুললে চলবে না, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’

এ সময় তিনি জানান, এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দুটি দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কোন দুটি দেশ থেকে সেটি সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ত্রিদেশীয় সফরে গত ২৫ এপ্রিল জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে আটটি চুক্তি হয়।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে আরও কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৪ মে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান শেখ হাসিনা। ৬ মে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৯ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।