Lead

স্মৃতিময় শহীদ মিনার

শহিদমিনার-400x200একুশ আসে একুশ যায়। কিন্তু স্মৃতিময় অতীত থেকে যায় মনে। শহীদ মিনার, শহীদ সব স্মৃতি আঁকড়ে থাকে বাঙালির মন। একুশের দিনে জেনে নিন শহীদ মিনারের ইতিহাস। কারণ চর্চার মাধ্যমেই সম্ভব ইতিহাস টিকিয়ে রাখা।

১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর সেডের পূর্বপাশে তৈরি করা হয় প্রথম শহীদ মিনার। তখন শহীদ মিনারে যুক্ত করা হয়েছিলো হাতে লেখা একটি কাগজ। তাতে লেখা ছিলো ‘শহীদ  স্মৃতিস্তম্ভ’।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল। মিছিল বন্ধ করতে পুলিশের গুলি ছোঁড়া শুরু করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী আব্দুল জব্বার ও রফিক উদ্দীন আহমেদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। সেদিন আত্মাহুতি দেন আব্দুস সালাম, আবুল বরকত। মাত্র ৮/৯ বছর বয়সী কিশোর অহিউল্লাহও পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমানসহ অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেন।

২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি যারা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় এই শহীদ মিনার। এর ডিজাইনার ছিলেন বদরুল আলম। তৎকালীন ছাত্রনেতা জে এস শরফুদ্দীনের তদারকিতে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শেষ করেছিলো ছাত্রছাত্রীরাই। সহযোগীতায় ছিলেন আরও দুজন রাজমিস্ত্রী।

সেদিন সিমেন্টের যোগান এসেছিলো পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভবন তৈরির জন্য রাখা ইট,বালিতে গাঁথা হয়েছিলো শহীদ মিনারের গাঁথুনি। ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ ভোর হবার আগেই শেষ। একটি কাপড়ে ঢেকে রাখা হয় সদ্য তৈরি করা স্থাপনাটি। পরে শহীদ শফিউরের বাবা আনুষ্ঠানিকভাবে এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করলেন ২৪ ফেব্রুয়ারি।

শহীদ মিনার নিয়ে ‘শহীদ বীরের স্মৃতিতে’ শিরোনামে খবর ছাপা হয় দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। এই পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায়। এদিন সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ঘেরাও করে, ভেঙে ফেলে শহীদ মিনার।

পরবর্তীতে ঢাকা কলেজে একটি শহীদ মিনার গড়ে তোলা হলেও তৎকালীন সরকারের নির্দেশে সেটাও ভেঙে দেয়া হয়। ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সংবিধান উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেয়। এই স্বীকৃতির পর শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়ন করেন হামিদুর রহমান। দুই পাশে দুই পতিত সন্তানকে নিয়ে মা দাঁড়িয়ে আছেন-এমন প্রতীকী ব্যঞ্জনায় গড়ে তোলা হয় প্রাণের শহীদ মিনার।

সরকারিভাবে ১৯৫৭ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয় শহীদ মিনারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। এর তত্ত্বাবধান করেন হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদ। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে।  এ বছরই ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের  উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে থাকা মিনারটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে ভেঙে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে হামিদুর রহমানের মূল নকশা সামান্য পরিবর্তন করে নির্মিত জাতীয় শহীদ মিনার, যার যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালের ৫ই মে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.