‘সীমান্ত হত্যা বন্ধে নাগরিকদের এডুকেট করতে হবে’

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের তরফ থেকে কতিপয় বিষয় আলোচনা হয়েছে। তা হল- সীমান্তে যেন ফায়ারিং কম ঘটে। এটি যেন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। আমাদের টার্গেট সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা এবং ভারত কর্তৃপক্ষ আমাদের এই দাবিতে একমত পোষণ করে আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে।”

সচিব বলেন, “সীমান্তে যেন উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়, এজন্য অবশ্য দুই দেশের নাগরিকদের আমাদের এডুকেট করতে হবে। তারা যাতে করে তাদের সীমান্ত ক্রস না করে। আন্তর্জাতিক নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। তাহলে আমার মনে হয় যে, বিএসএফ এবং বিজিবির দায়িত্ব পালন করতে সহজ হবে এবং এ ধরনের কিলিং ইনসিডেন্স আমাদের দেশে ঘটবে না।”

বৈঠকে মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মাদক বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা জানি বাংলাদেশ কখনই মাদক উৎপাদক দেশ না। কিন্তু তারপরও ট্রাফিকিং হয়। আমরা এ ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

“ওই দেশ (ভারত) ফেন্সিডিল তৈরি করে। এটা তাদের জন্য একটি ড্রাগ। কিন্তু আমরা মনে করি এটি একটি মাদক। ভারত কর্তৃপক্ষ এ উদ্বেগের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আরও আন্তরিকতা সঙ্গে কাজ করবে।”

বৈঠকে সমুদ্রসীমায় অবৈধ ট্রালার চলাচলের ব্যাপারে উদ্বেগ জানানোর প্রসঙ্গ তুলে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, “সমুদ্রসীমায় যাতে বিদেশি ট্রলার আসতে না পারে, আমাদের সমুদ্র যেন ট্রাফিকিং এর রুট না হয়- সে ব্যাপারেও আমরা ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

“ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে যায়, সেগুলো আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি। তারা আমাদের কথা স্বীকার করেছে এবং তারা সতর্ক অবস্থায় থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।”

বাংলাদেশে ভারতের কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তৎপরতা নেই জানিয়ে সচিব বলেন, “ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো আস্তানা বাংলাদেশে নাই, তৎপরতা নাই তা আমরা তাদের জানিয়েছে। তারপরও আমি বলব- এগুলো  ‘ছদ্মপরিচয়ে’ থাকে। এ বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো তথ্য পেলে আমাদের জানাবে।”

শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরাই অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয় কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “গত এক বছরে ভারতের নাগরিকরাও এ নিয়ম অমান্য করেছেন। মাদক চোরাচালানের সময় আটজন মারা গেছেন।”

তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবির গুলিতে কারও মৃত্যু হয়েছে কি না- তা নিশ্চিত করেননি স্বরাষ্ট্র সচিব।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় গত সাত মাসেই অন্তত ২৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও বহুবার সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। বিএসএফের হাতে প্রাণহানি বন্ধে এই বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র’ দেওয়ার কথাও এক সময় বলা হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে।

স্বরাষ্ট্র সচিব মঙ্গলবারের বৈঠককে ‘অতীতের চেয়ে সফল’ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীনতার পরে এটি ছিল সপ্তদশ বৈঠক।

“অতীতের অন্যান্য বৈঠক থেকে এটি সফল ও সন্তোষজনক। এজন্য সফল বলব, কারণ ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নও হয়েছে এ বছর।”

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিব ছাড়া পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক, বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদসহ ১৮ জন অংশ নেন। ভারতের পক্ষে  ছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব মেহর্ষীসহ ১৫ জন।