সিরিজ জয়ে ‘ঈদ মোবারক’
ঢাকা জার্নাল : ঈদ মোবারক! লিটন দাস যখন ইমরান তাহিরকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করলেন, তখন গ্যালারির দর্শকরা এই ‘ঈদ মোবারক’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করলেন। শুরু করলেন জয়ের উৎসব। দু’ অথবা তিন দিন পর ঈদ উল ফিতর হলেও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেন বুধবারই (১৫ জুলাই) ঈদ উৎসব শুরু হলো। আসলে কেবল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নয়, বাংলাদেশ, এমনকি পুরো বিশ্বে যেখানে বাঙালিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, সেখানেই যেন বুধবার শুরু হয়েছে ঈদ উৎসব। উৎসবের এ উপলক্ষ ‘ওরা এগারোজন’, টিম বাংলাদেশ।
টিম বাংলাদেশ বুধবার চট্টগ্রামে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছে ক্রিকেট পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। জিতে নিয়েছে টানা চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ, স্বপ্নের সিরিজ, ঐতিহাসিক সিরিজ।
অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের ২৩তম ওভারে যখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো, তখন এ স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পুড়ছিলেন টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা। না, তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়নি। খেলার যে স্বাপ্নিক শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই আবার খেলা শুরু হয়। শেষও হয়েছে স্বাপ্নিক, ঐতিহাসিক!
নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান ও ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘বড় দল’কে সিরিজে হারানোর শুরুটা শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ড দিয়ে। সেই বৃত্তে ঢুকে পড়লো দক্ষিণ আফ্রিকাও। আর টানা সিরিজ জয়ের শুরুটা শুরু হয়েছিল জিম্বাবুয়েকে দিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতে শোকেসে উঠলো টানা চতুর্থ সিরিজের ট্রফিটা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ বোলারদের তোপে পড়ে অল্প রানে গুটিয়ে গিয়ে হেরে যায় প্রোটিয়া বাহিনী। সেটাকে সম্ভবত ‘দুর্ঘটনা’ ভেবেছিলেন দলের অধিনায়ক হাশিম আমলা। সেজন্যই কিনা বুধবারও টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসি, ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি আর তিনি মিলে রানের পাহাড় গড়বেন বলে! কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে আমলার নিশ্চয় বোঝা হয়ে গেছে ‘আগের ম্যাচের টাইগার বোলিং কোনোভাবেই দুর্ঘটনা ছিল না’। বৃষ্টিবিঘ্নিত সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও টাইগার বোলারদের তোপে ছত্রখান প্রোটিয়াদের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। অলআউট হওয়া থেকে বাঁচলেও দক্ষিণ আফ্রিকা খুড়িয়ে খুড়িয়ে সংগ্রহ করে ১৬৮ রান।
ডার্কওয়াথ লুইস (ডি/এল) পদ্ধতিতে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ১৭০ রান। সংগ্রহ ১৬৮ হওয়ায় ‘পিচের আচরণ ব্যাটিংবিরোধী’ ভেবে বোলিংয়ে নামলেও এবার উল্টো দেখতে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকানরা। তাদের ব্যাটসম্যানদের যেখানে ওভারপ্রতি ৪ রান করতেও ঘাম ঝরছিল, সেখানে কি নির্দ্বিধায় রান তুলছেন সৌম্য-তামিম ইকবালরা। কি নির্দয় হয়ে পেটাচ্ছেন চার-ছক্কা। সৌম্য-তামিমদের কোনো বেগ পেতে হয়নি রান তুলতে। বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের ম্যাচ জয়েও।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের পর সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতলো ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিংয়ে দুরন্ত পারফর্ম করা টাইগারদের শেষ ওয়ানডেতে বিশাল এই ব্যবধানের জয়ে তো গ্যালারিতে আগাম ঈদ উৎসব হবেই।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৫, ২০১৫