সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার ‘নিখোঁজ’ সাক্ষী ভারতের কারাগারে !
ঢাকা জার্নাল: যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি ভারতের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
সুখরঞ্জন বালি গত বছরের ৫ই নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তবে, সুখরঞ্জন বালা নামে এক ব্যক্তি কোলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী রয়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘নিখোঁজ’ সুখরঞ্জন বালি এবং দমদম কারাগারের এই সুখরঞ্জন বালা একই ব্যক্তি। ভারতের কারা কর্তৃপক্ষ, আদালতের নথিপত্র এবং আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অপহরণ রহস্য
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সুখরঞ্জন বালি শুরুতে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষের সাক্ষী।
কিন্তু পরে তিনি পক্ষ পরিবর্তন করে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হতে রাজী হন- বলে বিবাদী পক্ষের আইনজীবিরা জানান।
গত বছরের ৫ই নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ হন।
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আইনজীবীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
যেভাবে দমদম কারাগারে
জানা যায়, অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে উত্তর চব্বিশ পরগণার স্বরূপনগর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৩ ডিসেম্বর রাতে এক বাংলাদেশিকে আটক করে বি এস এফ।
বসিরহাট আদালতের নথি ঘেঁটে কোলকাতার স্থানীয় আইনজীবী মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম সুখরঞ্জন বালা, পিতার নাম প্রয়াত ললিত রঞ্জন বালা, গ্রাম পাড়ারহাটি, থানা গঙ্গারামপুর, জেলা পিরোজপুর, বাংলাদেশ।
আইনজীবী মোশারফ হোসেন ধারণা করছেন, বিএসএফএর সদস্যদের বেশিরভাগই যেহেতু হিন্দীভাষী, তাই আটক হওয়ার পর কাগজপত্রে নাম রেকর্ড করার সময় হয়তো সুখরঞ্জন বালির নাম ভুল বানানে লেখা হয়েছে।
কোর্টের নথি থেকে আরও জানা গেছে, বি এস এফ ওই ব্যক্তিকে স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নম্বর ৭১৩, তারিখ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২।
পরের দিন, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর সুখরঞ্জন বালিকে আদালতে পেশ করা হয় অবৈধভাবে ভারতের সীমানা অতিক্রম করার অভিযোগে। বিদেশী আইনের ১৪ এ এবং ১৪ সি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
বসিরহাটের দ্বিতীয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তেসরা এপ্রিল সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেন। মাঝের সময়টা তিনি জেল হেফাজতেই ছিলেন।
কারারক্ষীর সাজা
সুখরঞ্জন বালি ভারতে কারাগার থেকে নিউ এজ পত্রিকার কাছে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এই বিবৃতিতে তিনি তাকে অপহরণের কথিত ঘটনা এবং কিভাবে তাকে ভারতে ঠেলে দেয়া হয় তার বর্ণনা দেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কারা বিভাগের প্রধান রনভীর কুমার বলেন, “জেলে থাকা কোনও বাংলাদেশী বন্দীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর বিবৃতি নেওয়া এবং সেই বিবৃতি কোনও বিদেশী কাগজের হাতে পৌঁছিয়ে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। তাঁর কোনও আত্মীয়ও যদি আসেন, তাহলে সেই সাক্ষাৎ প্রার্থীর পাসপোর্ট – ভিসা পরীক্ষা করে নেওয়া হয়।”
পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দমদম জেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বালিকে জেরা করেছেন এবং বালি জেলের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিনি নিজেই অর্থের লোভ দেখিয়ে এক জেলরক্ষীকে দিয়ে ওই বিবৃতি বাইরে পাঠিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, যে বালির কথা মতো ওই জেলরক্ষী বিবৃতিটি নিয়ে সীমান্তে যান এবং সেখানে এক চোরাচালানকারীর হাতে সেটি তুলে দেন।
এই জেলরক্ষীকে চিহ্ণিত করে কারা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি