ঢাকাসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

সব সময় অক্সিজেন প্রয়োজন তারামন বিবির

Taramanঢাকা জার্নাল: বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে বাঁচতে হবে কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে। এ নিয়ে তিনি এবং তার পরিবার দুঃচিন্তায় পড়েছেন। তারামন বিবি বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৬ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার দুপুরে তারামন বিবির সঙ্গে কথা হয়। শারীরিক অবস্থা কেমন, জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘ডাক্তার এসেছিল। তারা বলেছে, আপনার অক্সিজেন নিতেই হবে। এক-দুই ঘণ্টা নিলে হবে না, সারা রাত অক্সিজেন নিতে হবে। অক্সিজেন না নিলে আপনি চলতে পারবেন না।’

কথার ফাঁকে ফাঁকে কাশি আসায় কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল এই তারামন বিবির। তিনি বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার পর সব সময় অক্সিজেন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার বলেছে, অক্সিজেন না নিলে আপনার সমস্যা হবে। অক্সিজেন না নিলে মাথাব্যথা করবে, নইলে শ্বাসকষ্ট হবে।’

‘তাই বাড়িতে কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে যেতে হবে। যে ডাক্তার এসেছিল, সে বলেছে, কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে (অক্সিজেন) না দেয়, আমি তো আর দিতে পারছি না।’

কর্তৃপক্ষ যদি অক্সিজেনের ব্যবস্থা না করে, তাহলে তো আপনাকেই অক্সিজেন কিনতে হবে, এমন কথার জবাব দিতে গিয়ে তিনি কিছু সময়ের জন্য থেমে যান। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি না দেয়, তাহলে আমার আর কিছু্ করার নেই। আমার তো সেই (কেনার) সামর্থ নেই।’

সেক্ষেত্রে সুস্থতার জন্য আপনি সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা আশা করেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সরকার ও বিত্তবান সকলের সহযোগিতা কামনা করি।’(তারামন বিবিকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৯১৩-৯২৭৩০৭ নম্বরে বিকাশ করতে পারেন)।

তারামন বিবির ছেলে মো. আবু তাহের বলেন, ‘মা’র তো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। একটি ফুসফুস অকার্যকার হয়ে গেছে। তাই কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। ডাক্তাররা বলছে, এই সমস্যা থাকবেই। তাকে পরোপুরি ভালো করার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘মা এখন মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার বলেছে, বাসায় যাওয়ার পর তার সব সময় অক্সিজেন নেওয়া লাগবে। এটা হলে সে একটু সুস্থ থাকবে। কিন্তু আমাদের অক্সিজেন কেনার সামর্থ নেই। এখন মা বলতেছে, সরকারের কাছে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের আবদার করবে।’

আবু তাহের আরো বলেন, ‘মা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনে তিনি অবদান রেখেছেন। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য একাত্তরে যিনি জীবন বাজি রেখেছিলেন, তিনি আজ অসুস্থ। স্বাধীন দেশের যেকোনো নাগরিক চাইলে মাকে সহযোগিতা করতে পারেন।’

সম্প্রতি তারামন বিবি শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুড়িগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি তারামন বিবিকে ময়মনসিংহ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আনা হয়। এদিন দুপুরে সোয়া ২টার দিকে সেখান থেকে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানিদের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি। কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে যুদ্ধ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তারামন বিবিকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়। কিন্তু এই মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় ১৯৯৫ সালে। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

ঢাকা জার্নাল,২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.