সংসদে তোপের মুখে ক্ষমা চাইলেন ইনু
ঢাকা জার্নাল: জাতীয় সংসদের তোপের মুখে ক্ষমা চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রথমে স্পিকারের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেও পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে বক্তব্য প্রত্যাহার করেন তিনি।
সোমবার (২৫ জুলাই) মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ৩০ মিনিট সংসদ কার্য বন্ধ ছিল। এ সময় কোটা পূরণ হলেও স্পিকারের অনুপস্থিতির কারণে সংসদ শুরু হতে বিলম্ব হয়। রাত ৮টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আসেন। পরে সংসদ কার্য শুরু হলে সংসদ সদস্যরা তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পয়েন্ট অফ অর্ডারে বক্তব্য রাখার সুযোগ চান।
শুরুতে স্পিকার আপত্তি জানালেও পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে হাসানুল হক ইনুকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী আমাদের সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের জন্য তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আর তথ্যমন্ত্রী তার নিজ এলাকায় কি কি কাজ করেছেন আগে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ’র বক্তব্যের পর সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। তিনি বলেন, ‘সংসদে সবাই দোষী, একমাত্র তথ্যমন্ত্রীই সাধু। তিনি সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা অবমাননাকর। আমরা যখন দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, সেসময় তিনি এমন বক্তব্য রেখে জাতিকে বিভ্রান্ত করলেন। তার এই বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। আমরা যদি সবাই চলে যাই, তাহলে আপনি সংসদ চালাবেন কীভাবে? তিনি একজন তথ্যমন্ত্রী হয়ে জাতিকে কি তথ্য দিলেন? তাকে অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’
এরপর পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘তিনি (তথ্যমন্ত্রী) এ তথ্য কোথায় পেলেন? তার ব্যখ্যা তাকে দিতে হবে। তার এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী, আপনিসহ (স্পিকার) এই সংসদের কোনো সদস্যই বাদ পড়ে না। আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই- আপনি আপনার সব মিডিয়া এবং দুদক নিয়ে আমার এলাকায় তদন্ত করেন, কোনো অনিয়ম পেলে আমি পদত্যাগ করবো। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেবিনেটে বলতে পারেন। ঢালাওভাবে মন্তব্য করে সংসদ সদস্যদের অপমান করেছেন। এ অধিকার জাতি আপনাকে দেয় নাই।’
এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হককে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান স্পিকার। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে একটি বক্তব্যের ভুল বোঝাবুঝির কারণে সংসদ সদস্যরা কষ্ট পেয়েছেন। এ জন্য আমি তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। গতকালই গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছি। আমি মূলত আমার সেই বক্তব্যে অতীতের সরকারের অনিয়মের কিছু তথ্য দিয়েছিলাম। এ সময় কিছু উদাহরণ টেনেছিলাম মাত্র।’
তার এ বক্তব্যের পর আবারও সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্পিকার সংসদ সদস্যদের এ বিষয়ে আর কোনো বক্তব্য থাকলে তার সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন। এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা চিৎকার করে বলেন, ‘ওনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। উনি এমন বক্তব্য রাখতে পারেন না।’
পরে তথ্যমন্ত্রী আবার দাঁড়িয়ে তার এ বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তার সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকায় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো এমপি, আমি জানি টিআর কিভাবে চুরি হয়। সরকার ৩০০ টন দেয়, এর মধ্যে এমপি সাহেব আগে দেড়শ টন চুরি করে নেয়। তারপর অন্যরা ভাগ করে। সব এমপি করে না। তবে এমপিরা করেন।’
অনলাইন পোর্টালগুলোতে ওই সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে রাজনীতিকসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে রাতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যে টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে, এ বিষয়ে মন্ত্রী কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি হলে বা কেউ এতে দুঃখ পেয়ে থাকলে তা অনভিপ্রেত বলে জানান এবং সেক্ষেত্রে নিজেও দুঃখপ্রকাশ করেন।’
বিবৃতিতে ইনু বলেন, ‘আমি নিজে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকভাবে সম্মান করি এবং সেই সম্মান অক্ষুণ্ন রয়েছে। তারপরও কেউ যদি অনভিপ্রেতভাবে দুঃখ পেয়ে থাকেন, সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
এদিকে ইনুর ওই মন্তব্যের কারণে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উনি (ইনু) সবাইকে চোর বানিয়েছেন। সবাই খেলে উনিও খেয়েছেন।’
জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়া ও তারেক সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই কথা বেখেয়ালে বলে ফেলেছি।’
সাথে সাথে মন্ত্রিপরিষদের আরেক সদস্য বলেন, ‘কিসের বেখেয়াল? আপনি এটা বুঝে-শুনেই বলেছেন।’ এরপর ‘সরি’ বলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
ঢাকা জার্নাল, ২৫ জুলাই, ২০১৬।