শীর্ষ সংবাদ

শ্রম আইনে অধিকার পাচ্ছেনা গৃহশ্রমিকরাও

SAM_2397ঢাকা জার্নাল: ঢাকা: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০০৬ সালের শ্রম আইনের সংশোধনীতে গৃহশ্রমিকরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির ইতিবাচক অবস্থানের পরেও ‘শ্রম আইন (সংশোধন) বিল, ২০১৩’-তে গৃহশ্রমিকদের অধিকার অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। 
এতে দেশের ২০ লাখের বেশি শ্রমিকের জীবন ও ভাগ্য মালিকদের হাতেই জিম্মি থেকে যাচ্ছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ও সামাজিক উদ্যোগকে গুরুত্ব না দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার পরিপন্থী। তাই জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এই আইনের বিলে আইএলও কনভেমনশন অনুযায়ী গৃহশ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত জরুরি।
‘শ্রম আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভূক্তি ও গৃহশ্রমিকদের শোভন কাজ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন অনুসমর্থন আদায়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি’র বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস সেমিনার হলে ২৫টি বেসরকারি সংস্থার নেটওয়ার্ক ‘গৃহশ্রমিক প্রতিষ্ঠা নেট ওয়ার্ক’ দুপুরে এ সংসদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রোববার আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবসকে সামনে রেখেই এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন, ড. ওবায়দুল ইসলাম খান, বিলস’র সহকারি নির্বাহি পরিচালক ও নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, বিলস’র ভাইস চেয়ারম্যান ও মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আবুল হোসেন এবং স্কপ’র সদস্য সচিব আশিকুল আলম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ২০ লাখেরও বেশি গৃহশ্রমিক রয়েছে যার ৮০ শতাংশ নারী ও শিশু। ২০০৬ সালের লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী ১৫ বছরের ওপরের বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার। এর মধ্যে ৭৮ শতাংশ নারী এবং ৬০ শতাংশ পুরুষ। অথচ একুশ শতকে এসেও অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১০’ চূড়ান্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে গেজেট হয়নি। গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা অনুমোদনসহ গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্ত করতে ২০১১ সালের ৯ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত ১০ দফা নির্দেশনা দেন। বিচারপতি ঈমান আলী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই নির্দেশনা দিলেও ২০০৬ সালের শ্রম আইনে তা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। তখনও হাইকোর্টের নির্দেশনাকে পাশ কাটানো হচ্ছে।
সংসবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৬ সালের শ্রম আইনটি যখন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন গৃহশ্রমিকের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে। সর্বশেষ সংসদীয় কমিটির ইতিবাচক অবস্থানের পরেও বিষয়টিতে পাশ কাটিয়ে সংশোধন আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ২০১১ সালের ১৬ জুন ‘গৃহশ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ’ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন (১৮৯) বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সরকার এই কনভেনশনটি অনুস্বাক্ষর করেনি।
এসব কারণে শুধু দেশের গৃহশ্রমিক নয় বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরাও তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আইনগত কোন ভিত্তি না থাকায় ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১১জন। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫জন। গত ১০ বছরে গৃহশ্রমিদের উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭৯৭টি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৯৮ জন। নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৯৯জন। অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১০০জন।
শ্রম আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভূক্ত, আইএলও কনভেশন (১৮৯) অনুস্বাক্ষর, নীতিমালা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ, মজুরি নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ এবং হত্যা-নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৫, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.