সংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

শ্রদ্ধায়-চেতনায় নূর হোসেন

05ঢাকা: বাড়তি কোনো আয়োজন নেই। আড়ম্বরও নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবেও নেই তেমন কোনো আয়োজন। তবে গণতন্ত্রকামী মানুষের শ্রদ্ধার কমতি নেই নূর হোসেনের প্রতি।

অতি সাধারণ মানুষের আবেগ যেনো উথলে উঠেছে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে। হাজারো মানুষের দেখা মিলেছে এখানে। সকাল সাতটা থেকে ছোট ছোট মিছিলে মানুষ আসতে থাকেন ফুল আর ব্যানার হাতে। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ নূর হোসেনের আত্মার শান্তি কামনায় মানুষ মোনাজাত করেছেন রাজপথে দাঁড়িয়েই।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) নূর হোসেন চত্বরে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে’ এমনটিই দেখা গেছে। ভোর থেকেই নূর হোসেন চত্বরে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শত শত গাড়ির ভিড় ঠেলেই মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন শ্রদ্ধা জানাতে।

মিডিয়া কর্মীদের মাধ্যমে কাভারেজের জন্য কেউ বসে থাকেননি। শুধু শ্রদ্ধা জানাতে আর গণতন্ত্রের সত্যিকারের বিজয় দেখতেই যেনো তাদের ছুটে আসা।

খুব সকালেই নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি,  মাহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর-দক্ষিণ), ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিএনপি, ছাত্রদল,  ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ রাজনৈতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নূর হোসেনের প্রতি। সকাল আটটার পর ছোট ছোট মিছিল ব্যানার নিয়ে আসে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন।

ব্যস্ততম গুলিস্তানের রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ ছিল না। তার পরেও কোনো বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। যেনো দল মত নির্বিশেষে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন এখানে।

নাম না জানা শত শত মানুষের এই সমাবেশে শুধু একই চাওয়া ‘গণতন্ত্রে বিজয় দেখতে চাই’। শহীদ নূর হোসেন চত্বরে পোস্টারে লেখা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগানটি মিছিলে নতুন মাত্রা পায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়-‘স্বৈরাচার নিপাত গেল, গণতন্ত্র মুক্তি পেল’।

সরকার সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী দলগুলোর এই স্লোগানটিই যেনো সত্যি হয় এমন মন্তব্য শোনা যায় উপস্থিত মানুষের মুখে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের গুরুত্ব
শহীদ নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের আলোচনা চলে যায় পাশের চায়ের দোকানে। অনেকের অভিযোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই দিবসটি পালনে।  নূর হোসেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কোথাও কোনো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না বলে আলোচনায় উঠে আসে।

এদিকে, শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে শহীদ নূর হোসেনকে স্মরণ করেন  রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

নূর হোসেনের আত্মত্যাগ
১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন নূর হোসেন।

১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন স্বৈরশাসক এরশাদ। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে স্বৈর সরকার ১৯৮৭ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলগুলো।

তাদের একমাত্র দাবি ছিলো, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর একযোগে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন, আহত হন অনেকে। নিহত অপর দুই ব্যক্তি হলেন যুবলীগ নেতা নুরুল হূদা বাবুল এবং আমিনুল হূদা টিটু।
পরবর্তীতে আন্দোলন বেগবান হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্বৈরশাসক এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।

নভেম্বর ১০, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.