শেষ পর্যন্ত এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দায়মুক্ত
শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা গোলাম হোসেনের দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ না পেয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন।
কিন্তু ওই প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। তবে পুনরায় অনুসন্ধানেও কোনো ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে পায়নি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। শেষ পর্যন্ত চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর কমিশন থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত ওই সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগটি অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায় দুদক কর্তৃক নথিভুক্তির (অব্যাহতি) মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
যার স্মারক নং- দুদক/ বি. অনু. ও তদন্ত-১/৮০-২০১৩। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আট দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপরই দুদক উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা নিয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান আইনকে পাশ কাটিয়ে অবচয় সুবিধা দেওয়া, শুল্ক সুবিধায় পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শুল্ক গোয়েন্দাদের সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রাখা এবং দেশের একাধিক মোবাইল কোম্পানির সিম প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় না করার অভিযোগ ছিল।
সূত্র আরো জানায়, তিনি এনবিআর চেয়ারম্যান থাকাকালীন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হয়। এই অবচয় সুবিধা ৬ জুন ২০১৩ সালের আগে আমদানি করা বিল অব এন্ট্রি নেটিংকৃত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গাড়ি অবচয় সুবিধার বিদ্যমান ১৪৯ নম্বর প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন ৩৫৩ নম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এর ফলে ৬ জুন ২০১৩ সালের আগে আমদানি করা ও নেটিংকৃত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধায় খালাসের সুযোগ পায়। গাড়ি অবচয় সুবিধাসংক্রান্ত সংশোধিত এসআরওর কারণে সরকার ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের নিয়োগ ও বদলিতে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ছিল গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। দীর্ঘ দুই বছরের অনুসন্ধান শেষে দুদকের ওই সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সম্প্রতি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ আরো ১৬ জনকেও অব্যাহতি দিয়েছে দুদক।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শিপ মেরামত ও ভাড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মকসুমুল কাদেরসহ ১৬ জন।
আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচজনকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে রেলওয়ের মোটর আর্মেচার মেরামতের কার্যাদেশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পছন্দের লোকজনকে দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া অন্যরা হলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) মো. দেলোয়ার হোসাইন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. টি এ চৌধুরী, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সেকেন্দার আলী ও রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মাজহারুল ইসলাম খান।
এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ অফিসার মো. বুলবুল আহমেদ পাটোয়ারী ও ঢাকার তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। আর সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে খুলনা বিদ্যুৎ সরবরাহের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মোশারফ হোসেনকে।
অন্যদিকে ভুয়া রসিদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন কৃষি প্রকৌশল প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান প্রকল্পের প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন খান। এ ছাড়া ভুয়া রসিদের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও রাজস্ব খাতের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌরসভার মেয়র মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানসহ ছয়জন। অন্যরা হলেন হোসেনপুর পৌরসভার প্রাক্তন সচিব মো. সফিকুর রহমান ও নুরুল ইসলাম মিন্টু, প্রাক্তন সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুল আলম, প্রাক্তন উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম এবং প্রাক্তন হিসাবরক্ষক মো. এমদাদুল ইসলাম।