শিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

শিল্পকলায় জমজমাট রাধারমণ সংগীত উৎসব

07শীতের আমেজ শিল্পকলা একাডেমীর খোলা চত্বরে। মাঝখানে শামিয়ানার নিচে শত শত মানুষ। বাজছে বাঁশি, বাজছে ঢোল। গানের সুরের সঙ্গে নেচে-গেয়ে তাল মেলাচ্ছেন শ্রোতারা। সুরের জাদু ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মাঠে। শ্রোতারা গলা মেলাচ্ছেন বাংলা ভাষার অন্যতম লোককবি রাধারমণ দত্তের গানের সঙ্গে। বিরহী গানের সুরে আকুল হয়ে উঠেছিল শ্রোতাদের প্রাণ।
গতকাল ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে গতকাল উৎসবের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় সুরের মূর্ছনায় দারুণ জমে ওঠে এ উৎসব।
প্রথম দিনের মতো গতকাল শুক্রবারও উৎসবের শুরুতে ছিল আলোচনা। ‘বাঙালির আদি সংস্কৃতি আছে। তা হলো—গ্রামীণ সংস্কৃতি আর যা কিছু, তা হলো—আরোপিত সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির পথ ধরেই যেন আমাদের সবকিছু পরিচালিত হয় এবং এক সুরে বাজে।’ বক্তারা এভাবেই তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘লোকগানের সৃষ্টা গ্রামীণ অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মানুষ। কিন্তু তাঁদের যে গভীর চিন্তা, কথা ও বাণী তা দেখলে আমরা যারা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ, তাদের মূর্খ বলে মনে হয়। এ উপলব্ধিটা আমাদের সকলের থাকা উচিত।’ সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতায় তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মকে তাদের অভিভাবকেরা এ দেশের মূল ধারা সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে পাঠ দিচ্ছেন না। ক্রমশ ব্যাকুল হয়ে উঠছে ভালো প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের দিকে। আর তাই আজকের শিশুরা জ্ঞান ও বোধের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘রাধারমণ স্বশিক্ষিত ছিলেন আর স্বশিক্ষিত মানেই সুশিক্ষিত। বর্তমান সময়ে আমরা যখন কাজ করছি, স্মরণানুষ্ঠান করছি, রাষ্ট্র পরিচালনা করছি, আমাদের সকল কাজের সুর যেন এক হয়ে বাজে। তাহলেই উদ্দেশ্য সফল হবে, নয় তো কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে।’
আলোচকের বক্তব্যে লোক গবেষক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রাধারমণ হিন্দু ছিলেন, মুসলিম ছিলেন, নাকি অন্য কিছু ছিলেন—সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো তিনি গানের মাধ্যমে মানুষের কথা বলেছেন এবং মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। আলোচনা করেন লোক গবেষক হারিসুল হক। আলোচনা শেষে সিলেট, মৌলভীবাজার ও নবীগঞ্জ থেকে আসা শিল্পীরা রাধারমণের গান পরিবেশন করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রবীণ লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি। রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতির সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, রাধারমণ গবেষক অধ্যাপক নন্দলাল বসু, শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত ও নৃত্য বিভাগের পরিচালক সোহরাবউদ্দিন। উৎসবে ‘রাধারমণ দত্তের অপ্রকাশিত গান’ গ্রন্থর মোড়ক উন্মোচিত হয়। সংবেদ থেকে প্রকাশিত এই বইটি সম্পাদনা করেন বিশ্বজিৎ রায়।
কাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় শিল্পকলা একাডেমীর মাঠে শুরু হবে উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিনের আসর।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.