শিক্ষা-সংস্কৃতি

‘শিক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক বিষয় থাকতে পারে না’

রোববার (২১ আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক ‘শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এতে সভাপতিত্ব করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।এছাড়া বক্তব্য প্রদান করেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রামেন্দু মজুমদার, দৈনিক জাগরণ-এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবেদ খান, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি শিক্ষবিদ অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ১৯৭১: গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলা উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুজিত সরকার এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

সভাপতির সূচনা বক্তব্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেণেড-বোমা হামলায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহতদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘাতকদের আংশিক বিচার হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঘাতকের বিচার হলেও যে রাজনীতির জন্য ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সে রাজনীতির বিচার হয়নি। এই নজিরবিহীন হামলা ও হত্যাকাণ্ড নিছক কয়েকজন ব্যক্তির অভিপ্রায় অনুযায়ী ঘটেনি। এটি ছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অন্তর্গত। ঘাতকদের জবানবন্দি থেকেও জানা গিয়েছে ক্ষমতাসীন বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই নৃশংস হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার দায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহন করতে হবে।’

‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং ’৭১-এর গণহত্যা যে রাজনৈতিক কারণে হয়েছিল, ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সেই রাজনীতির কারণেই সংঘটিত হয়েছে। ’৭১-এর গণহত্যা এবং জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারকালেও আমরা বলেছি পর্দার আড়ালে অবস্থানকারী হত্যার প্রধান কুশিলব এবং সম্পৃক্ত সংগঠনসমূহের বিচার না হলে জাতি যেমন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে একইভাবে এই রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডও অব্যাহত থাকবে।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘’৭১-এর গণহত্যা, ’৭৫-এ জাতির পিতা এবং তাঁর প্রধান সহযোগীদের হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের রাজনীতি শুধু বিরোধী দলে নয়, প্রশাসনের ভেতরও ক্রিয়াশীল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবস্থান এবং সংস্কৃতিতে তাদের আধিপত্য অন্তিমে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তানে পরিণত করতে পারে। আমরা চাই নতুন শিক্ষানীতিতে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যা কিছু আছে সব বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দর্শন প্রতিস্থাপন করতে হবে। মাদ্রাসা সহ সকল শিক্ষামাধ্যমে বাঙালির ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দর্শন পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় দেশ ও জাতিকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত রাখতে পারব না।’

২১ আগস্টে হামলার হতাহতের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এরকম একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রথমত নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে তা সত্য এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। নতুন কারিকুলাম নিয়ে গত কয়েকবছর কাজ করছি। পড়াশানোর বিষয়টি এখন জোর জবরদস্তিমূলক হয়ে গেছে। শিক্ষাকে আনন্দময় করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বীজ বপনের জন্য নতুন কারিকুলাম সাজাচ্ছি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি তাহলো শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি আরও বাড়াচ্ছি। কেননা আমরা যাই অন্তর্ভুক্ত করি না কেন যারা শিক্ষা দেন তারা যদি যথাযাথ শিক্ষাটা না দেন তবে আমাদের চেষ্টাটাই বিফলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী বছর পুরোটাই পাঠ্যসূচির পরিমার্জন করতে থাকবো। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা পড়ে পড়ে শিখুক। সে অনুযায়ী আমাদের বইগুলো তৈরি করা হয়েছে। ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি আগামী পাঠ্যসূচিতে। আগামী বছর আরও পরিমার্জন করবো। আমরা এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষদের নিয়েই কাজ করছি। আমরা ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭২-এর চেতনার ভিত্তিতেই নতুন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করছি।’

তিনি ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামের একটি পাইলট প্রোগ্রামের রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় এখন অনেক কিছু নতুন যুক্ত হতে যাচ্ছে। রিপোর্ট প্রদানকারী বলেছেন, শিক্ষা কার্যক্রমের ছেলেমেয়েরা এই পাইলট প্রোগ্রামে আনন্দের সঙ্গেই পড়ালেখা করছেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘শিক্ষাক্রমট যুগোপযোগী করা আসলে ধারাবাহিক কাজ। নতুন প্রযুক্তিগুলো সংযুক্ত করতে হচ্ছে। বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কওমী মাদ্রাসা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে বড় সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। আমারা পাঠ্যসূচিতে যাই রাখি না কেন যিনি পড়াচ্ছেন তিনি যদি বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে তুলে ধরতে না পারেন এর দায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেই নিতে হয়। পূর্বে পাঠ্যসূচিতে আকারে ইঙ্গিতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর শাসনকালকে নানাভাবে হেয় করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে তার নেগেটিভ বিষয় চোখে পড়বে না। মাদ্রাসায় এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কারণ যারা পড়াচ্ছে তারা সরকারি নির্দেশনা না মেনে নিজেদের মতো করে পড়াচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পরিবর্তন আনার। আমরা নতুন কারিকুলামে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। হেফাজতের পরামর্শে সাধারণ পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন করা হয়েছে সে সব বই তো মাদ্রাসায় পড়ানো হয় না।’

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা বর্বরতম দিন। রাষ্ট্রীয় নির্দেশে কিভাবে এ ধরনের ভয়াবহ হামলা হতে পারে, এটা একটি নজির। আওয়মী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করলে আমরা অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি দরকার নৈতিক শিক্ষা।’ তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীকে পাঠ্যসূচিতে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন।

দৈনিক জাগরণ এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘আজকের দিনটা সমগ্র জাতির জন্য শোকের দিন। ২১ আগস্টেও ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করারই ষড়যন্ত্র। মূল পরিকল্পনাকারীদের আমরা খুঁজে পাইনি। কতিপয় ব্যক্তিকে নানাভাবে জড়িত করার চেষ্টা দেখেছি। এটার যথাযথ ইতিহাস তুলে ধরতে হবে যাতে পরবর্তী প্রজন্ম ২১ আগস্টের এই নারকীয় হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দিতে চায়, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে মুছে দিতে চায় তাদের চিহ্নিত করে মূলোৎপাটন করতে হবে নয়তো বারবার এ ধরণের ঘটনার সম্মুখিন হতে হবে।’

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘আজ সেই ভয়াল ২১ আগস্ট। সেই দিনের একজনের মুখ থেকে শুনেছি, ২১ আগস্টেও হামলার ক্ষত নিয়ে এখনও বেচে আছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। পাঠ্যসূচি থেকে সাম্প্রদায়িক বিষয়গুলো বাদ দিলে ভবিষ্যতের প্রজন্ম প্রগতিশীল হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এ ধরনের নারকীয় হামলা হবে না।’

ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না, করে শুধু বাংলা মাধ্যমে। এই বাংলা মাধ্যমকে নিয়ে অনবরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পাঠ্যক্রমের ভেতর মৌলবাদের চিন্তাধারা লালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে আমি শুনতে চাই। তারা শিক্ষাকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান জানতে চাই।’

১৯৭১: গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমি নিজের গবেষণায় দেখেছি, ১৯৪৮ সাল থেকে যে সরকারগুলো এসেছে তারা প্রত্যেকেই পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করেছে। তখন থেকেই আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির উপর হামলা হয়েছে অন্যদের অর্থ্যাৎ ডানপন্থীদের উপর কোনো হামলা হয়নি। ১৯৭৪ সালের যে শিক্ষা কমিশন সেটার প্রতিবেদন কুদরত এ খোদার নয় কবীর চৌধুরীর লেখা। মৌলবাদীদের আক্রমণের দুটি প্রধান জায়গা এক. ইতিহাস, দুই. বাংলা সাহিত্য। দীর্ঘদিন ধরেই পাঠ্যসূচির ডানপন্থীকরণের ফলেই আজকের শিক্ষার সাম্প্রদায়িক রূপ পেয়েছে। ১৮ বছর পরেও যদি ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও হামলার বিচার না হয় তবে এর দায় আওয়ামী লীগের। যদি আওয়ামী লীগ চায়, শিক্ষা ব্যবস্থা অসাম্প্রদায়িক অবশ্যই হবে। এ ধরনের আক্রমণ হতেই থাকবে যতদিন না শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ হবে। আওয়ামী লীগ চাইলেই শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ হবে।’

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেষ করতে পারে না। এখানে বেশির ভাগই গরীবদের ছেলেমেয়েরা পড়ে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো কওমী মাদ্রাসার পাশে গরীবদের জন্য বোর্ডিং স্কুলের ব্যবস্থা করলে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েকে কওমীতে না পড়িয়ে বোর্ডিং স্কুলে পড়াবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সহ সব শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তিবান্ধব করতে হবে। তাদেরকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে এজন্য স্কুলের লাইব্রেরীগুলোর পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাইমারী স্কুল থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মীয় সৌহার্দবোধ বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত সরকার বলেন, ‘আমরা হামেশাই আত্মতুষ্টির জন্যে অথবা শিক্ষাবঞ্চিত মানুষদের লক্ষ্য করে বলে থাকি, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।’ কিন্তু এ দেশে সেই শিক্ষাব্যবস্থারই বেহাল অবস্থা। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ বিজ্ঞান ও নৈতিক মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং সুষ্ঠুভাবে তার প্রয়োগ। শিক্ষার্থীরা যাতে দক্ষ ও মূল্যবোধ অর্জনের সুযোগ লাভ করে সেদিকে শিক্ষক, পরিবার এবং প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নতুবা দেশকে চিরকাল পরনির্ভরশীলই থাকতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলা উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। ছোটবেলায় আমরা স্কুলে কত রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতাম। এখন এগুলো অনেকটা কমে গেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি অপেক্ষা রাজনীতি ও এর নানা অনুষঙ্গ যেমন ধর্মের অপব্যবহার, অর্থ ইত্যাদি ঢুকে গেছে বেশি। শিক্ষার্থীদের ভেতর যদি সঠিকভাবে মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়; যদি বাঙালি সংস্কৃতির প্রকৃত ধারা অঙ্কুরিত হয় তাহলে তারা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে দীক্ষিত হবে না এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশি ভাবধারা চর্চায় ব্রত থাকবে।’

সমাপনী বক্তব্য নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, ‘২১ আগস্টের শোকাবহ দিনে আমাদের আজকের আয়োজনে মূল বিষয় শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা। এমন একটি বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে এই কারণে যে, বহু আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প বুনে চলেছে মৌলবাদী শক্তি। আর এই শক্তি শুধু জামায়াত-বিএনপিতেই নয় আওয়ামী লীগেও ঘাপটি মেরে আছে তারাই শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে যার ফলে বিভিন্ন সময়ে এই সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় দিক্ষিত প্রজন্ম জঙ্গীবাদের দিকে ঝুুঁকছে। এই জঙ্গিরাই ও মনোভাবাপন্ন অপশক্তিই ২১ আগস্টের বোমা হামলা করেছে। তাই আমরা সরকারের কেছে আবেদন করবো শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে যাতে প্রজন্ম জঙ্গিবাদের দিকে না ঝুঁকে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড বোমা হামলার উপর নির্মিত শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্র ‘জিহাদের প্রতিকৃতি’র সংক্ষিপ্ত ভাষ্য প্রদর্শিত হয়।