শিক্ষা-সংস্কৃতি

শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা পরিকল্পিত: দীপু মনি

সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ‘শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। সভাপতিত্ব করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক জাফর ইকবাল, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার শিক্ষক শংকর দেবনাথ, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সিগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার পটুয়াখালীর ছাত্র জয়দেব, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সুনামগঞ্জের সমাজকর্মী ঝুমন দাস এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। ’৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীরা জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য শিক্ষকদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজও শিক্ষকরা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীরা মৌলবাদীদের হাতে নিগৃহীত, নিপীড়িত হচ্ছেন। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর শিক্ষক গুরুকে যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করেন তা আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করার পায়তারা আরম্ভ করেছে। তার ধারাবাহিকতা আজো চলমান।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে কেবল রেমিট্যান্স আসছে না -বিদেশি সংস্কৃতি ও পোশাক আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। আমাদের দেশের একটি গোষ্ঠী যারা নিজেদের পছন্দ ও বিশ্বাস অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যা সংঘটিত করছে। এছাড়া কিছু মানুষ আছে যারা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলি করছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে যারা আইন প্রয়োগ করেন। নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’

ওয়েবিনারে নিজেদের লাঞ্ছনা ও দুর্দশার বর্ণনাকারী সনাতন ধর্মীয় ভুক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের মামলাগুলো যেন দ্রুত সুরাহা হয় সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’ বক্তব্যের শেষে ‘আমি বির্বত, লজ্জিত, মর্মাহত -ভুক্তভোগীদের সহমর্মিতা জানাতে কেবল একথাগুলো বলাই যথেষ্ট নয়’ বলে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

সভাপতির প্রারম্ভিক ভাষণে নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘অতি সম্প্রতি নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা থেকে আমরা যদি এক দশক আগে সংঘটিত রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার পর্যালোচনা করি কোনওটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিবেচনা করা যাবে না। ১৯৭৫-সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপ্রেমী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী নিরীহ নাগরিকদের উপর ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে বাংলাদেশকে জিয়াউল হকের পাকিস্তান ও মোল্লা উমরের আফগানিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাবার জন্য, যার চ‚ড়ান্ত বহি:প্রকাশ দেখেছি ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সময়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানো হয়েছে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন এবং সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর পরিকল্পিত হামলা একই ষড়যন্ত্রের অন্তর্গত বলে আমরা মনে করি।

‘আমরা গত কয়েক বছর ধরে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলো এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে, যার প্রধান উদাহরণ- হেফাজতে ইসলামের দাবির কারণে ২০১৭ সালে আমাদের স্কুল পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তন। এরপর আমরা দেখেছি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষকদের উপর লাঞ্ছনা, নির্যাতন ও গ্রেফতারের ঘটনাবলী। তিন দিন আগে নড়াইলে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় কলেজ ছাত্র আকাশ সাহাকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করা হলেও অন্যান্য হিন্দু পরিবারের উপর হামলার পাশাপাশি স্কুল শিক্ষক দীলিপ সাহার বাড়িতেও হামলা হয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে গত কয়েক বছরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিম কুমিল্লার স্কুল শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথ, মুন্সিগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয়চন্দ্র মণ্ডল এবং পটুয়াখালীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়দেবচন্দ্র শীল তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন। শিক্ষাঙ্গণ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক হামলার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে এ বিষয়ে আমাদের শিক্ষাবিদরা বলবেন। আমি মনে করি, কোনও সমৃদ্ধ জাতির মনোজগতে নতুন অথবা বিজাতীয় কোনও মতবাদের আধিপত্য বিস্তার করতে হলে সবার আগে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যা আমাদের দেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি করতে চাইছে পাকিস্তান আমল থেকে।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বৃদ্ধির আরেকটি কারণ- প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি উন্নত। তবে এর অধোগতি ঘটতে বিলম্ব ঘটবে না যদি না সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের সুরক্ষা, সমঅধিকার ও মর্যাদার পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হয়। এর জন্য আমরা প্রায় এক দশক ধরে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছি, যা ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল। এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি আজকের ওয়েবিনারে আমাদের দাবি- বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শনের আলোকে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।’

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মৌলবাদীরা জানে এই মেরুদণ্ডটি যদি দুর্বল করে দেয়া যায় তাহলে পুরো জাতিকেই বিভ্রান্ত করা যাবে। এতে তারা সফলতাও অর্জন করেছে। তার প্রমাণ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নড়াইলের পর পর দুটি ভয়ঙ্কর লজ্জাস্কর ও কলঙ্কজনক ঘটনা। নিকট ও দূর অতীতের বহু এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা সকলেই জানেন। আমাদের অবিলম্বে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে অমানবিক এবং অসুস্থ এক সমাজ নিয়ে দেশের অগ্রগতিকেই আমরা বাধাগ্রস্ত করবে।’

ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, ‘আমরা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে বাংলাদেশের সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। ভারতে শরণার্থী শিবিরগুলোতে শরণার্থীরা ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ভাগাভাগি করেছিল -সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িকতা আজ অনুপস্থিত। জামায়াত-হেফাজতসহ অন্যান্য দল ও সংগঠনের নেতারা এদেশের মানুষের মগজ ধোলাই করে সাম্প্রদায়িকতার বীজবপন করছে।’

অসাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোন বিরোধ নেই।’

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘ভিকটিমদের বক্তব্য শুনে বুকটা ভেঙ্গে গেছে। সবাই একভাবে থাকতে না পারলে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। শঙ্কর দেবনাথ, জয়দেব ও হৃদয় চন্দ্রের উপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর ভ‚মিকায় আমি হতাশ। তাদের আরও দায়িত্বশীল ভুমিকা গ্রহণ করা দরকার ছিল।

বর্তমানে শিক্ষক পেটানোর মহোৎসব চলছে বাংলাদেশে। আলিম চৌধুরী থেকে শুরু করে ড. জাফর ইকবাল, হৃদয় চন্দ্র মন্ডল, স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং সর্বশেষ রতন সিদ্দিকী এই নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। দেশের ভবিষ্যত কর্ণধারদের তৈরির কারিগরদের যারা নিপীড়ন করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং যে যার অবস্থান থেকে এর প্রতিবাদ করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভুক্তভোগীদের আইনী সহযোগিতা করার জন্য আইনজীবীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। নির্মূল কমিটির নেতৃত্বে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে সরকারকেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।’

শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের শিক্ষক নিপীড়ন, নির্যাতন, অসম্মান ও হত্যা বস্তুত সামাজিক অবক্ষয়ের চ‚ড়ান্ত প্রকাশ। ধর্মান্ধতা ও ভোগবাদ মানুষকে ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ বিচ্যুত করেছে। যার কারণে এই সর্বনাশী অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এই অবক্ষয় ঠেকাতে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর কবল থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষক পেটানোর মহোৎসব চলছে বাংলাদেশে। আলিম চৌধুরী থেকে শুরু করে ড. জাফর ইকবাল, হৃদয় চন্দ্র মন্ডল, স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং সর্বশেষ রতন সিদ্দিকী এই নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। দেশের ভবিষ্যত কর্ণধারদের তৈরির কারিগরদের যারা নিপীড়ন করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং যে যার অবস্থান থেকে এর প্রতিবাদ করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার শিক্ষক শংকর দেবনাথ বলেন, ‘২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর ফ্রান্সের এক ব্যক্তির ওই দেশের প্রেসিডেন্টের সন্ত্রাসবিরোধী একটি পোস্টকে ফেসবুকে সমর্থন করেছি বলে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব তুলে উগ্রপন্থী মৌলবাদীগোষ্ঠী আমার বাড়ি-ঘর, ৫০০ ছাত্রছাত্রী সংকুলানের স্কুলভবন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে সবকিছু ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ঐ দিন আমি ও আমার পরিবার পরিজন প্রাণে বেঁচে গেলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে স্ব-দেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করছি। আমি এখন নিঃস্ব, সর্বশান্ত আর মাসে মাসে হাজিরা দিতে দিতে আরও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছি। হামলার কারণ হিসেবে আমি মনে করি আমাদের গ্রামে পাঁচটি মাদ্রাসা থাকলেও আধুনিক শিক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না যা আমি নিজের উদ্দেশে করেছি।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সিগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল বলেন, ‘এরাই ভালো শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে কিছু অতি অযোগ্য শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা কাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মৌলবাদী গোষ্ঠীকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। আর এই সুযোগে মৌলবাদীরাও বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পথ।’