শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

শহীদ নূর হোসেন দিবস

31ঢাকা: ১০ নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন নূর হোসেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দূর্বার আন্দোলনে জীবন দেয়ায় ইতিহাসে দিনটি তাই স্মরণীয় হয়ে আছে।

১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন স্বৈরশাসক এরশাদ। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে স্বৈর সরকার ১৯৮৭ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলগুলো।

তাদের একমাত্র দাবি ছিলো, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর একযোগে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগের একনিষ্ঠ কর্মী নূর হোসেন। তার বুকে-পিঠে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এই জ্বলন্ত স্লোগান।

আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল ঢাকা জিপিও’র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন, আহত হন বহু। নিহত অপর দুই ব্যক্তি হলেন যুবলীগ নেতা নুরুল হূদা বাবুল এবং আমিনুল হূদা টিটু।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলো ১১ ও ১২ই নভেম্বর সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। আরও ত্বরান্বিত হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন।

এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্বৈরশাসক এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।

নূর হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাতবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে বসবাস শুরু করে। পিতা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় আটো-রিকশা চালক। তার মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে মোটর চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা, সেমিনার প্রভৃতি। রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

নভেম্বর ১০, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.