শঙ্কা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন লংগদুর বাসিন্দারা
ঢাকা জার্নাল: ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন রাঙামাটির লংগদুর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিপদ আঁচ করতে পেরে তারা ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
হামলাকারীদের দেওয়া আগুনে সর্বস্ব হারানো লক্ষ্মী দেবী চাকমা জানান, ‘শুক্রবার সকালে গোসল করার সময় হৈচৈ শুনতে পাই। তখন ঘরে থাকা ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। অবশ্য আগের দিন ঘটনা আঁচ করতে পেরে পরিবারের ছোট ও বয়স্কদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আজ (শনিবার) এলাকায় এসে দেখি আমার বসতভিটা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’
লক্ষ্মী দেবীর মতোই নিজের বসতবাড়িতে ফিরে এসেছিলেন প্রমোদ চাকমা ও প্রেম ছন্দ চাকমা। তাদের ঘরবাড়ি আগুনের হাত থেকে রেহাই পেলেও তার আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতদের অনেকেরই ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরলেও লক্ষ্মী দেবী ফিরে গেছেন পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লংগদুর বাসিন্দা মনি শংকর চাকমা জানান, ‘গতকালই (বৃহস্পতিবার) যাদের সঙ্গে বসে চা খেয়েছিলাম, তারাই শুক্রবার আমার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে একবার নিঃস্ব হয়েছিলাম। ২০১৭ সালে এসে আবারও নিঃস্ব হলাম।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে মনি চাকমা জানান, ‘ঘরের লোকজনকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিহারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। যখন আগুন দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছিল, তখন প্রশাসনের সহায়তায় আমিও ছুটে যাই। তখন আর কিছুই করার ছিল না। চোখের সামনেই সাজানো সংসারের সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কলিন মিত্র চাকমা বলেন, ‘প্রশাসনের আশ্বাসে বাড়ি ফিরে আসার জন্য অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কেউ কেউ এসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় ফিরে গেছেন বিহারে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে। অনেকেই দূরে চলে গেছেন। ফলে তারা কোথায় আছেন, সে খবরও পাচ্ছি না। পরিস্থিতি শান্ত হলেও লোকজনের আতঙ্ক এখনও কাটেনি।’
লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা জানান, ‘খুবই পরিচিত মানুষজন আমার ও আমাদের পাড়ার ঘরগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। এর পরপর নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনসহ আমরা তাদের ধরার চেষ্টা করি কিন্তু তারা পালিয়ে যায়। চোখের সামনেই আমার ঘরটা পুড়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ঘর পুড়ে গেছে, আমি মামলা করব। কিন্তু আরও কয়েকদিন পর। তিনটিলায় মোট ১৮০পরিবার, মানিকজোড় ছড়ায় ৮৮পরিবার তার মধ্যে ৫টা দোকান, বাইট্টপাড়া এলাকায় ৪২টি পরিবার ৪টি দোকান। তিনটিলা বাইট্টাপাড়া মানিকজোড় ছড়ার লোকাজন সবাই এলাকার বাইরে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে। এখনও এখানে আসতে চাচ্ছে না। কারণ তাদের আশ্রয়ের একমাত্র স্থানটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লোকজন ফিরে আসছেন। কাল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. জানে আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় যে সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হবে। আমরা সেই কাজই করছি এখন।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক চালক নয়নকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে নয়নের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয়রা। এ সময় মিছিল থেকে উত্তেজিত জনতা রাস্তার পাশের জেএসএসের কার্যালয় ভাঙচুরসহ তিনটিলা নামক স্থানে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
ঢাকা জার্নাল, জুন ৪, ২০১৭।