রাবি ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দিল শিবির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা জার্নাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে শিবির ক্যাডাররা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তুহিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় রাত ১২টা ১০ মিনিটে হাসপাতালটির একটি অ্যাম্বুলেন্স তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় অ্যাম্বুলেন্সটি পঙ্গু হাসপাতালে পৌছায়। পৌনে আটটায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসব বিষয়ে নিশ্চিত করেন তুহিনের সঙ্গে থাকা রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তুহিনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। শিবির ক্যাডাররা তুহিনের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়ায় তিনি এখনও অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা শেষে তুহিনসহ চার/পাঁচজন নেতাকর্মী মাদার বখশ হলের দিকে যাচ্ছিলেন।
এসময় মোটরসাইকেলে করে কতিপয় শিবির ক্যাডার এসে আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শিবির ক্যাডাররা পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলোমেলোভাবে পালালে তুহিনকে শিবির ক্যাডাররা ধরে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। শিবির ক্যাডাররা তুহিনকে কুপিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে মারাত্মক জখম করে ফেলে রেখে যায়।
এসময় তাদের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক শামসুজ্জামান শাওন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে, এ ঘটনার পর রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন হলে অবস্থান নিয়েছে। আহত তুহিনকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বি কে দাম বলেন, আমরা একবার তার অস্ত্রোপচার করেছি। তবে তার হাত ও পায়ের রগ জোড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সারওয়ার জাহান সজল, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফীন রাত ১১টার দিকে রামেক হাসপাতালে তুহিনকে দেখতে যান।
অধ্যাপক মিজানউদ্দীন তুহিনের অবস্থা দেখে বলেন, এ ধরনের ঘটনা সভ্য মানুষ করতে পারে না।
হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
হামলাকারীরা সনাক্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সোবহান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা কাউকে চিহ্নিত করতে পারিনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। আশা করি, খুব শিগগির হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তুহিনের ওপর হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পাহারা বাড়ানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, তুহিনের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর সোনাদীঘি এলাকায় বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। সেখানে ইসলামী ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে আগুন দেওয়া হলে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা গিয়ে তা নেভায়।
প্রসঙ্গত, নবগঠিত কমিটির রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠিত হচ্ছিল। গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলে জহুরুল হক নামে এক শিবিরের ‘সাথী’কে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে আহত করে। অভিযোগ রয়েছে, তুহিনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। পরে তারা জহরুলের ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে মতিহার থানা পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে তুহিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মুহাম্মদ বিন কাশেম নামে এক শিবিরের সাথীকে পেটায় ছাত্রলীগ। গুরুতর আহত অবস্থায় শিবিরের ওই সাথীকে রাজশাহী ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার পরই বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা তুহিনের হাত পায়ের রগ কাটার ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২৩, ২০১৩।