‘রাজনীতি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে’
ঢাকা জার্নাল: দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকায় রাজনৈতিক নেতারা এখন সন্ত্রাসের ভাষায় কথা বলছেন৷ পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছেন, দিচ্ছেন সংঘাত-সহিংসতার উস্কানি৷ আর এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে রাজনীতি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ফটিকছড়িতে ১১ই এপ্রিল আওয়ামী লীগের হরতাল বিরোধী মিছিলে হামলা এবং তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকে সাহসী কাজ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেক হোসেন খোকা৷ তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সমাবেশে এভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান৷
এরপর শুক্রবার এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, সাদেক হোসেন খোকা সন্ত্রাসীদের মতো কথা বলেছেন৷ দেশের মানুষ তাদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করবে৷
এই দুই বিরোধী নেতার বক্তব্যকে দলের ভিতর গণতন্ত্র না থাকার চরম এক উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷
তিনি বলেন, দু’টি দলই ভোটের রাজনীতি করে, গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে না৷ ভোটের রাজনীতিতে ক্ষতায় যাওয়ার জন্য একদল সন্ত্রাসের উস্কানি দেয় এবং আরেকদল রাজনৈতিক নেতাদের জেলে রেখে ক্ষতায় থাকতে চায়৷ এর কোনোটাই শুভ লক্ষণ নয়৷ এতে রাজনীতিতে সন্ত্রাসের ভূমিকা বাড়বে৷
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা না থাকায় তারা গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না৷ তারা কথা বলে সন্ত্রাসের ভাষায়৷ তারা পেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষতায় যেতে চায় বা টিকে থাকতে চায়৷ ফলে দেশের রাজনীতি এখন সংঘাত সহিংসতায় পূর্ণ৷
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতা যদি সন্ত্রাসের ভাষায় কথা বলেন তাহলে দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে তা সঞ্চারিত হয়৷ তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়েন৷ আর যারা সন্ত্রাসী কাজ করে তারা উৎসাহিত হয়৷ তাতে পুরো দলে সন্ত্রাসীদের প্রভাব বাড়ে৷ ফলে গণতন্ত্রমনা যদি কেউ দলে থেকে থাকেন তারাও কোণঠাসা হয়ে পড়েন৷ যা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷
তাঁর মতে, বাংলাদেশের রাজনীতির এখন বৈশিষ্ট্যই হল সন্ত্রাস ও সহিংসতা৷ এর জন্য রাজনৈতিক নেতারাই দায়ী৷ তাঁরা প্রশ্রয় না দিলে কখনো এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না৷ তিনি বলেন, এই সন্ত্রাস নির্ভরতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে৷ তাহলে দেশেও গণততন্ত্র আসবে৷ তখন সন্ত্রাসের ভাষা নয়, গণতন্ত্রের ভাষাতেই কথা বলবেন রাজনীতিবিদরা৷