Leadশিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

রাজধানীর ১১১ জন  ‘কোচিংবাজ’ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মাউশি

ঢাকা জার্নাল: রাজধানীর  নয়টি স্কুলের ১১১ জন  ‘কোচিংবাজ’ শিক্ষকের এমপিও বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশের আলোকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক ও মাউশি সূত্রে  এই তথ্য পাওয়া গেছে।

‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ ভঙ্গ করে বাণিজ্যিকভাবে কোচিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি দুদক অভিযানে নামে। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা এসব শিক্ষকের নামের তালিকা সুপারিশসহ মাউশিতে পাঠানো হয়। কোচিং বন্ধ করতে আইন করারও সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘দুদকের সুপারিশসহ যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তা এখনও হাতে পাইনি। পেলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’‌

দুদকের তালিকা অনুযায়ী ১১১ শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাত জন, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১৪ জন, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের আট জন এবং রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচ জনকে কোচিংবাজ শিক্ষক হিসেবে অভিহিত করেছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।

এই নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন রাজধানীর আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—উইলস লিটল ফ্লাউয়ার স্কুল অ্যন্ড কলেজ, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল, ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যবরেটরি ইনস্টিটিউট, মিরপুরের ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মাইলস্টোন কলেজ ও বিসিআইসি কলেজ।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে রাজধানীর ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোচিংয়ে জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যারেটরি হাইস্কুল ও মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে জানিয়েছেন,  কেচিংয়ে সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বার বার নিষেধ করা হয়েছে। লিখিতভাবেও কোনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষকদের সতর্ক করেছেন। তারপরও কোচিং বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে রাজধানীর কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ করতে একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে কোচিংয়ে জড়িত থাকার প্রমান পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা। গত আগস্ট মাসে দুদকের অনুসন্ধান টিম রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল এজিবি কলোনি ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য ঝটিকা অভিযান চালিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেশ কিছু শিক্ষককে কেচিং পরিচালনা করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানের সময় শিক্ষকরা কোচিং করাবেন না বলে দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে প্রতিশ্রতিও দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকরা কোচিং বন্ধ করনেনি। 

অনুসন্ধান টিমের অভিমত

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ওইসব স্কুলের কোন কোন শিক্ষক কোচিং করান, তা ছাত্র, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। গোপনে ও প্রকাশ্যে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত প্রতীয়মান হয়েছে। 

কোচিং বন্ধে আইন চায় দুদক

কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রেখে (মাউশি)।‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ করা হয়েছে। তবে কোচিং বন্ধে কোনও আইন করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট আইনের বিধান না করা হলে কোচিং বন্ধ কঠিন। প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রেখে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করার কথা বলেছে অনুসন্ধান টিম। 

বদলি ও শিফট পরিবর্তনের সুপারিশ

শিক্ষকদের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলি, এক শাখা থেকে অন্য শাখায়, দিবা শিফট থেকে প্রভাতী শিফটে নির্দিষ্ট সময় সময় বদলি করার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে। 

কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তির বিধান

কোনও শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন কমিয়ে দেওয়া, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্তের মতো কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ২০১২ সালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালায়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের এমপিওবিহীন শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত থাকলে প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেতন-ভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন স্থগিত, বেতন কমিয়ে দেওয়াসহ অন্যান্য সব বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এমপিওবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষক জড়িত থাকলে একই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।  কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি ও অধিভুক্তি বাতিল করবে সরকার।

এছাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জড়িত থাকলে ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন- এস এম আববাস, সিনিয়র রিপোর্টার বাংলা ট্রিবিউন।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১০, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.