রংপুরে মেসে নার্সিংয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১
ঢাকা জার্নাল:রংপুর শহরে বেসরকারি এক নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শহরের একটি মেসে সহপাঠীর কাছে নোট নিতে গিয়ে একই নার্সিং ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রসহ পাঁচ যুবকের ধর্ষণের শিকার হন ওই দুই ছাত্রী। ঘটনার পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুই ছাত্রীর একজন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ ঘটনায় নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্র আলমগীর কবিরকে রাতেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য চার যুবক এখনো পলাতক।
ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রীকে কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম জাহিদুল ইসলামের দেওয়া ভাষ্য, গত ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রংপুর শহরের মেডিকেল পূর্বগেটের একটু দূরে বেসরকারি একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রী পড়াশোনার জন্য নোট নিতে প্রতিষ্ঠানের পাশে সর্দারপাড়ায় একটি মেসে তাঁদের এক সহপাঠী নিমাইয়ের কাছে যান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ধর্ষণের আগে ওই পাঁচজন দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ছবি ধারণ করেন। এই ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। লোক জানাজানির ভয়ে ওই দুই ছাত্রী প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখেন। পরে অভিভাবকদের জানান। পরিবারের সম্মতিতে দুই ছাত্রীর পক্ষ থেকে একজন পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক তদন্ত ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে জানান, ওই মেসে চারটি কক্ষে নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের ১২ জন ছাত্র বাস করেন। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় আলমগীর আর নিমাই ছাড়া অন্যরা শুক্র ও শনিবারের ছুটিকে সামনে রেখে বাড়ি গিয়েছিলেন।
গতকাল রাতে নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ওই দুই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা গত সোমবার বিষয়টি তাঁকে জানান। এরপর বিষয়টি তিনি কোতোয়ালি থানায় জানালে ওসি তাঁদের থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। গতকাল রাত ১১টার দিকে তাঁদের থানায় নিয়ে মামলা করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি এ বি এম জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার শিকার দুই ছাত্রীর পক্ষে এক ছাত্রী বাদী হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী, বহিরাগত চার দুর্বৃত্তসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সহপাঠী নিমাইকে থানায় রাখা হয়েছে। ওসি জানান, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার থানায় এসে দুই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই ছাত্রীকে কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
থানায় উপস্থিত সহপাঠী নিমাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলমগীরসহ পাঁচজন আমাকে কক্ষের বাইরে নিয়ে বেঁধে রেখে আমার দুই সহপাঠীকে ধর্ষণ করে।’
আজ বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই ছাত্রীর ঘটনাটি জানার পর আমি থানায় যাই। মামলাটি তখন প্রক্রিয়াধীন ছিল। আমি দুই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলি। কোনো ধরনের ভয় না পেতে তাদের আশ্বস্ত করি। প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, আজ দুই ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষা হবে। তাঁদের চিকিৎসা ব্যয়সহ সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে ওই নার্সিং ইনস্টিটিউটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি জানাজানির পর প্রতিষ্ঠান দুর্বৃত্তদের বাঁচাতে দুই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে আপসরফার চেষ্টা চালায়। প্রতিষ্ঠানকে এলাকার সব লোকজনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে—এমন যুক্তিও দেখানো হয়। কিন্তু দুই ছাত্রীর পরিবার এতে রাজি না হওয়ায় তা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ০২, ২০১৬।