সব সংবাদস্পটলাইট

যৌন হয়রানির প্রতিবাদে উদাহরণ কারিশমা ফাতিহা

30 নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কারিশমা ফাতিহা তার মিড টার্ম পরীক্ষা দিতে বসুন্ধারা আবাসিক এলাকা হয়ে তার ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছিল। এ সময় খালি রাস্তায় এক লোক তার শ্লীলতাহানি করে।
লোকটি একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভার। সে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার নামে কারিশমার সাথে কথা বলে। ঘটনার দিন বিকেল চারটা। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এমন সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে থামায়। কারিশমার ভাষায়, ড্রাইভার তাকে বলে-
‘এক্সকিউজ মি, আপু আপনি কি আমাকে এই ঠিকানাটা বলতে পারেন? গাড়ীর ভেতর থেকে সে জিজ্ঞাসা করতে থাকে।’
কারিশমা বলে, ‘সে আমার হাতে একটি কাগজের টুকরা দেয়। আমি কিছু বলার আগেই সে তার হাত গাড়ির বাইরে হাত বাড়ায় এবং আমার স্তন স্পর্শ করার চেষ্টা করে।’
কারিশমা বার বার তার হাত সরিয়ে দেয় এবং সে বারবার চেষ্টা করতে থাকে। এরপর কারিশমা দ্রুত হাটতে থাকে। রাস্তাটি ছিল নির্জন এবং তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।
প্রয়োজন প্রতিবাদ :
নারীদের জন্য এ ধরনের ঘটনা রাজধানী ঢাকায় নতুন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের নারীরা এই অবস্থায় কোন প্রতিক্রিয়া না করে চুপ থাকে। কোন নারী লাঞ্ছিত বা শ্লীলতাহানির শিকার হলেও লজ্জায় তা বলতে পারে না। প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না।
তবে ব্যতিক্রমী কারিশমা তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে ওই শ্লীলতাহানির বিষয়টি তুলে ধরে নিজের ফেইসবুকে লেখেন।
কারিশমার ভাষায়, ‘শ্লীলতাহানির বিষয়টি অনেক মেয়ে এড়িয়ে চলেন কারণ এর কারণে সমাজের লজ্জায় পড়তে হয়। কেউ সাহস করে শ্লীলতাহানির বিষয়টি বলে না। এটি কি আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ?
কারিশমা লেখেন, ‘আমার স্তনে কেউ স্পর্শ করে, আমার যৌবন নিয়ে খেলতে চায়, আমার এই জন্য রাগ নেই। আমি রাগ হই সেই নারীদের প্রতি যারা শ্লীলতাহানির পরেও নিজের মুখ খোলে না। আমি নারীদের বলতে চাই এখানে লজ্জার কিছু নেই। নারীদের বলার জন্য উৎসাহিত করছি।’
ফেইসবুকের এই পোস্ট পেয়ে অনেক মানুষ ও বন্ধু ও বন্ধুদের বন্ধুরা কারিশমাকে সাহস ও সমর্থন দিয়েছে। একই এলাকায় বসবাসরত ফেসবুকের বন্ধুর বন্ধুও এই সমস্যায় পড়েছিল।
এর আগে রওনক নূর নামের নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিল। রওনক নূর কারিশমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। একই গাড়ীর চালক তাকেও নির্যাতন করেছিল বলে নূর জানায়। নূর গাড়ীর নাম্বারটা লিখে রেখেছিল। এই ফেসবুক পোস্টের পর কারিশমাকে গাড়ীর নাম্বারটি দেওয়া হয়।
ফেসবুকে এই পোস্টের কথা কিছুদিন পরে সবাই তা ভুলে যায়। কিন্তু পরের সপ্তাহে আবার পোস্ট দেয় কারিশমা। এবার গাড়ীর নাম্বারসহ পোস্ট দেয় সে। নূরের কাছ থেকে পাওয়া নাম্বারটা সবাইকে ফেসবুকের মাধ্যমে সবাই জানিয়ে দেয়।
‘মজা লস?’ নামের একটি বিনোদন ফেসবুক পেজ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে থাকে। চলতি বছর ১৪ এপ্রিল টিএসসিতে বৈশাখের অনুষ্ঠানের জন্য মেয়েদের নিয়ে যে কেলেঙ্কারি করেছিল তাদের চিহ্নিত করেছিল ‘মজা লস?’।
বন্ধুর পরামর্শক্রমে ফেসবুক পেজটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই পেজের সদস্যরা রমনা থানার অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) রাজিব আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রমনা থানার সহায়তায় বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়ীর নাম্বার চিহ্নিত করা হয় এবং পরে গাড়ীর মালিকের নামও জানা যায়। এক সময় এডিসি রাজিব কারিশমাকে গাড়ীর মালিকের ছবি দেখালে, সে জানায় ওই ব্যক্তি তার শ্লীলতাহানি করেনি বলে জানায়।
তারপর গাড়ীর চালককে চিহ্নিত করে। এই অপরাধীর নাম উজ্জল বিশ্বাস। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। পরে রমনা থানার সহায়তায় অপরাধী উজ্জলকে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রেরণ করে। অপরাধী উজ্জল কারিশমাকে শ্লীলতাহানির কথা স্বীকার করে। উজ্জল বিশ্বাসের ভাষায়, ‘মন চাইছিলো বলে এই কাজ করেছিলাম’। একটি মামলা দায়ের করা হলে মোবাইল কোর্ট শুনানি শেষে তাকে ৬ মাসের কারাদ- দেয়।
এডিসির সহায়তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান কারিশমা ও নূর। তবে এই অপরাধীর শাস্তি কমপক্ষে ১ বছর প্রত্যাশা করেছিল তারা।
এটি দুই সপ্তাহ আগের ঘটনা। কারিশমা ফাতিহা ও রওনক নূর পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। আজ উজ্জল কারাগারে। আর তারা দুইজন ক্লাসে। এটি কারিশমার ক্রোধের ‘কারিশমা’।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.