মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ ডিপ্লোমা নার্সদের
ঢাকা জার্নাল : আন্দোলনরত ডিপ্লোমা নার্সদের মাইক কেড়ে নিয়েছে পুলিশ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে অবস্থান কর্মসূচি স্থলের। এমনকি অবস্থান কর্মসূচি থেকে উঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাদের।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মাইক কেড়ে নেওয়ার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি স্থলের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পুলিশ। এ অবস্থায় অন্ধকারেই অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মোববাতি জ্বালিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায় নার্সরা।
রাত ১০টার দিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২০০৭ সালের ব্যাচের সালমা খাতুন বলেন, দুপুরের আগে পুলিশ মাইক কেড়ে নিয়ে গেছে। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) তাদের আন্দোলন থেকে উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, শাহবাগের মতো লাঠিচার্জ করে কাল (১৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার) আমাদের উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দুপুরের আগে মাইক কেড়ে নেওয়া ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার সময় এ হুমকি দিয়েছে পুলিশি।
তবে পুলিশ যতই হুমকি দিক, লাঠিচার্জ করুক, গরম পানি দিক আমরা দাবি আদায়ের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো রকম আশ্বাসও পাইনি। তাহলে কেনো পুলিশ আমাদের উঠিয়ে দেবে প্রশ্ন করেন রিনা আক্তার।পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২০ এপ্রিল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ইশরাত জাহান জানান, মাত্র ২১ হাজার নার্স বেকার রয়েছে। প্রধানমমন্ত্রী বলেছেন ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাদের দাবি ব্যাচ ভিত্তিক, জেষ্ঠ্যতা অনুসারে এই নার্সদের নিয়োগ দিতে হবে। আর সে জন্য আমরা গত ৩ এপ্রিল থেকে টানা ১৫টি রাত-দিন অেবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।
সুপ্রিয়া মণ্ডল বলেন, আমার তিন বছর আগে থেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। তাতে কোনো ফলাফল পাইনি। গত ৩০ মার্চ শাহবাগে আন্দোলন করেছি। সেখানে পুলিশ আমাদের লাছি চার্জ করেছে, গরমপানি, মরিচের গুড়া মেরে আন্দোলন ব্যাহত করেছে। ওইদিন এসব ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এরপর গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৫দিন ব্যাপী কর্মসূচি চালিয়েছি। তারপর গত ৩ এপ্রিল থেকে লাগাতার কর্মসূচি চলছে।
রিনা আক্তার এবং সালমা খাতুন বলেন, আমরা প্রুধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছি গত ৩ এপ্রিল। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা: এম ইকবাল আর্সলানের আশ্বাস দেওয়ার পর কোনো ইতিবাচক লক্ষণ না দেখে টানা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি।
নার্সরা জানান, দেশে নার্সিং পেশায় ২ লাখ জনবলে ঘাটতি রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার নার্স নিয়োগের পদ সৃজন করেন। দুই ধাপে ২০০৬ সালের ব্যাচের কিছু অংশ বাদ রেখে সাড়ে ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। আনো নতুন করে ব্যাচ ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে নার্সরা।
গত তিন বছর ধরে সংক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালালেও গত ৩০ মার্চ শাহবাগে বড় ধরণের বিক্ষোভ সমাবেশ চালায় ডিপ্লোমা নার্সরা। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন কর্মসূচি চালাতে থাকে। গত ২৪ মার্চ স্বাচিপ সভাপতির আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করলেও আমার ৩ এপ্রিল থেকে টানা আন্দোলনে যায় ডিপ্লোমা নার্সরা।
ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ১৯, ২০১৬