ঢাকাসব সংবাদ

মৃত্যুর সম্ভাবনা ভেবেই বুক পকেটে চিরকুট রাখতো সবাই

Tofaelঢাকা জার্নাল : দেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিলো ঊনসত্তরে। মৃত্যুর সম্ভবনা রয়েছে জেনেই বুক পকেটে নাম-ঠিকানা লেখা চিরকুট রেখে সবাই শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে যোগ দিতেন।

এমনই একজন ছিলেন মতিউর রহমান। ১৯৬৯ সালে তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ২৪ জানুয়ারি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

রাজধানীর পল্টনে মনি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট ভবনে আয়োজিত এক প্রকাশনা উৎসবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রোববার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এটা আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হিসেবে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়েছিলো।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের গোড়াপত্তন করেছিলাম। ১৮ জানুয়ারি ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, আইয়ুব খানের পতন চাই’ শ্লোগান ঠিক করে সহস্রাধিক ছাত্র নিয়ে মিছিল করি। ১৯ জানুয়ারি বুয়েটের এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হলে ২০ জানুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল বের করি। সেই মিছিলেই পুলিশের গুলিবিদ্ধ হন আসাদ। তাকে মেডিকেলে নেওয়ার সময় আমার হাতেই মারা গেল। তখন তার শার্টকে পতাকা বানিয়ে আমরা শপথ করলাম, আসাদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আসাদ নিহত হওয়ার পর ২১ জানুয়ারি আধাবেলা হরতাল, ২২ জানুয়ারি কালো পতাকা ধারণ, ২৩ জানুয়ারি মশাল মিছিল ও ২৪ জানুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতালের কর্মসূচি পালন করি।

২৪ জানুয়ারি বিক্ষুদ্ধ ছাত্রনেতারা এক মন্ত্রীর বাড়ি পুড়িয়ে দিলে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্র নিহত হন। তাদের একজন হচ্ছেন মতিউর রহমান। যিনি সে সময় দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তারও বুক পকেটে একটা চিরকুট ছিল। সেখানে লেখা ছিলো-মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। যদি না ফিরি মনে করো, আমি দেশের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিয়েছি।

শুধু মতিউর রহমানই নন, সে সময় মৃত্যুর সম্ভাবনায় রয়েছে জেনে সবাই বুক পকেটে নাম ঠিকানা লেখা চিরকুট নিয়ে মিছিলে যোগ দিতেন।

মন্ত্রী বলেন, সেই চার ছাত্রের মরদেহ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে গেলে সে খবর পুরো ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে মানুষের ঢল নামে। গণঅভ্যুত্থান হয়।

তিনি বলেন, ঊনসত্তরে যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেইনি। আন্দোলন করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খানের পতন ঘটিয়েছি। যা দেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে।

‘ষাটের দশকের গণজাগরণ ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা প্রভাব’ নামের গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবটি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনু্ষ্ঠিত হয়।

এতে অন্যদের মধ্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সামসুদ্দোহা, ’৬৯-এ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের ট্রাস্টি মুকুল চৌধুরী ও মাহবুব জামান, গ্রন্থটির লেখক ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের কর্মী শেখর দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেখর দত্ত বলেন, গ্রামের মানুষের অনেকেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে জানেন না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম মনে করে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেনাদের মাধ্যমে। কিন্তু এর একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। আর এই বিষয়টি তুলে ধরতেই গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে।

বক্তারা এসময় সরকারের প্রতি মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রেক্ষাপট সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.