আন্তর্জাতিকসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

মুসলমানদের অপমান করা উচিত নয়

09যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে মুসলমানদের অপমান না করতে রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় গতকাল সকালে) ওবামা তাঁর শেষ ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে বলেন, ‘গণতন্ত্রে নাগরিকদের সঙ্গে মৌলিক বিশ্বাসের বন্ধন প্রয়োজন হয়।’ দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে ডেমোক্র্যাট-দলীয় বারাক ওবামা বলেন, ‘বিশ্ব আমাদের সমীহ করে, কারণ আমরা খোলামেলা এবং সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। যখন রাজনীতিকরা নিজ দেশের বা বিদেশের মুসলিমদের অপমান করে বক্তব্য দেন, যখন কোনো মসজিদ ভাঙচুর করা হয় কিংবা একটি শিশু নিপীড়িত হয়, তখন সেটি আমাদের  নিরাপদ করে না।’ বারাক ওবামা বলেন, ‘এটা (কোনো ধর্মকে অপমান) ঠিক নয়।

এ ধরনের কথা বা কাজ বিশ্বের চোখে আমাদের ছোট করে। এটা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন করে তোলে। এটা আমাদের দেশের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন রাজনীতি পরিহার করতে হবে, যা নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম বা গোষ্ঠীকে আঘাত করে।’ সম্প্রতি মুসলমান ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে উসকানি ও অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওবামা তাঁর ভাষণে দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার এবং কিউবার সঙ্গে ফের সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন।

একই সঙ্গে জাতীয় অগ্রগতি ও রাজনীতি, আয়বৈষম্য হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখার উপায়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের চিত্রও তুলে ধরেছেন। ওবামা বলেন, ‘এই চেম্বারে আমার শেষ ভাষণে আমি শুধু নতুন বছর নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি পরবর্তী পাঁচ বছর, ১০ বছর বা তার পরের সময়ের প্রতি আলোকপাত করতে চাই। আমি আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি আলোকপাত করতে চাই।’ সন্ত্রাসবাদ ও পরিবর্তিত অর্থনীতি নিয়ে বিচলিত মার্কিনিদের উদ্দেশ করে ওবামা বলেন, ভবিষ্যেক তাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়।

কেননা বিশ্বের মধ্যে এখন যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে শক্তিশালী ও টেকসই অর্থনীতি বিদ্যমান। পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওবামা বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত বাহিনী। যখনই পৃথিবীতে কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুর সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আমাদের কর্মপদ্ধতিতে সব সময়ই অগ্রাধিকার পেয়েছে মার্কিন জনগণের সুরক্ষা ও সন্ত্রাসের মূলোত্পাটন। কেউ যদি আমেরিকানদের পেছনে লাগে, আমেরিকানরা তাদের পেছনে লাগে। যেমনটা এখন জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বুঝতে পারছে।’ তিনি বলেন, আইএস যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি নয়। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়।

ওবামা বলেন, ‘৬০টিরও বেশি দেশের যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি দমনে ১০ হাজারেরও বেশি বিমান হামলা পরিচালনা করেছি আমরা। এ ছাড়া সন্ত্রাস দমনে স্থানীয় বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এসব উদ্যোগের কারণেই মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জঙ্গি দমনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।’ জাতীয় উন্নতিতে সবার অংশগ্রহণের কথা বলে ওবামা বলেন, ‘আমি আশা করছি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় উন্নতির জন্য এ বছর আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। নতুন বছরের জন্য আজ রাতে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রস্তাব করব।

এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বন্দুক সহিংসতা থেকে আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষা, সবার জন্য সমান বেতন, বেতনভোগী ছুটি ও ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি। এসব প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আমার লড়াই অব্যাহত রাখব।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, শরণার্থী ইস্যুতে আমাদের যে অবস্থান রয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরো উন্নত হবে।’  বিগত সাত বছরে তাঁর শাসনের সাফল্যগাথার উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরতে গিয়ে ওবামা বলেন, ‘আমরা প্রতিটা অঙ্গরাজ্যেই মানুষের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করার স্বাধীনতা দিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। বেকারত্বের হারও আমরা অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।

এক কোটি ৪০ লাখেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। এর সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতিও তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে এনেছি।’ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ওবামা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাকি বিশ্বের মতো আমরাও বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হব।’ তিনি বলেন, ‘অতীতকে প্রণোদনা না দিয়ে আমাদের উচিত ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা।

বিশেষ করে, সেই সব কমিউনিটিতে, যারা জ্বালানি জীবাশ্মের ওপর নির্ভরশীল।’ মার্কিন কংগ্রেসের সামনে দেওয়া বার্ষিক এই ভাষণে প্রথা অনুযায়ী পরবর্তী বছরের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা এবং সরকারের আসন্ন নতুন নীতিমালা তুলে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের শেষ মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছেন ওবামা। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১২ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার মেয়াদ ২০১৭ সালের জানুয়ারি শেষ হবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, সিএনএস, রয়টার্স।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.