মুক্তিযুদ্ধের পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে- মনজুর
বেতিয়ারা শহীদ দিবসে কমরেড মনজুর ,মুক্তিযুদ্ধের পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, যে স্বপ্ন ও অঙ্গীকার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন ও অঙ্গীকার থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে। শাসকদের আপোসকামীতা, আশ্রয়-প্রশ্রয়, ক্ষমতাকেন্দ্রীক নানা হিসাব-নিকাশের কারণে, যুদ্ধাপরাধীরা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ভিত্তির ওপর আঘাত হানছে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।
আজ ১১ নভেম্বর বেতিয়ার শহীদ দিবসে কুমিল্লার বেতিয়ারায় বেতিয়ারা শহীদ স্মৃতিসৌধ চত্ত্বরে বেতিয়ারার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় কমরেড মনজুর এসব কথা বলেন। জিয়াউল হোসেন জিবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় কমরেড মনজুরুল আহসান খান ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড মো. শাহ আলম, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আহসান হাবিব লাবলু, খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন চক্রবর্তী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সেলিম, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার এবং শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ বশির মাস্টারের বোন কামরুন্নাহার, নিজামউদ্দিন আজাদের ভাইপো খালিদ হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে কমরেড মনজুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প বলয় গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মুক্তিযুদ্ধের লিখিত ইতিহাসে বামপন্থীদের অবদানের কথা উপেক্ষিত হয়েছে। বেতিয়ারার সাহসী লড়াই ও আত্মদানকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে হবে।
সমাবেশে কমরেড মনজুর অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
সমাবেশের আগে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেতিয়ারার শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনী, সিপিবি, ঐক্য ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর আসর, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠন, কুমিল্লা জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় জনসাধারণ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
এদিকে ঢাকায় মুক্তিভবনস্থ সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেতিয়ারায় শহীদদের প্রতিকৃতিতে স্মৃতিসৌধে সিপিবিসহ বিভিন্ন দল-সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারাতে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন উৎসর্গ করেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ৯ জন গেরিলা যোদ্ধা। বেতিয়ারার এই যুদ্ধে যাঁরা শহীদ হন, তাঁরা হচ্ছেন- নিজাম উদ্দিন আজাদ, সিরাজুম মুনীর, মো. শহীদুল্লাহ, বশির মাস্টার, আব্দুল কাইয়ুম, জহিরুল হক দুদু, আওলাদ হোসেন, কাদের মিয়া, সফিউল্লাহ।