Leadসংবাদ শিরোনাম

মিতা নূরের আত্মহত্যা রহস্য: তদন্ত করছে না পুলিশ!

mita-noor-bg20130707044806ঢাকা জার্নাল: ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূরের আত্মহত্যার তদন্ত নিয়ে দুই পরিবার আর টানাহেঁচড়া করতে রাজি নয়। সে কারণে তদন্ত কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাজে সহযোগিতায় অনাগ্রহ, সেই সঙ্গে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া অভিযোগ ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করাটা আইনগত দিক দিয়ে সমীচিন হবে না।

এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়েই চাঞ্চল্যকর এই মৃত্যু বিষয়ে আর বেশি গভীরে যেতে চায় না পুলিশ। তবে যেহেতু ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসেনি; তাই, তদন্তের হালও ছাড়েনি তারা। যদি ভিসেরা রিপোর্ট স্বাভাবিক না আসে, তবে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা করবে। সে ক্ষেত্রে তদন্তে যা যা পাওয়া যাবে, সেগুলো ধরে পুলিশ কাজ করবে।

মিতা নূরের মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মিতা নূরের লাশ উদ্ধারের পর থেকে তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে থানা-পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি।

প্রাথমিকভাবে মিতা নূর আত্মহত্যা করেছেন বলে ধরে নেওয়া হলেও ঠিক কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, সেই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

দুই পরিবারের সবাই পুলিশকে জানিয়েছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে মিতা নূর আত্মহত্যা করেছেন। কী সেই পারিবারিক কলহ, তা জানার চেষ্টা করে যাচ্ছে তদন্তকারী বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

এক পর্যায়ে মিতা নূরের স্বামী শাহানূর রহমান রানার পরকীয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। পুলিশও শাহানুর রহমান রানার মোবাইল ফোনের এসএমএস, কললিস্ট ধরে বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদে দুই নারীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার তথ্য পায়।

এরপর মিতা নূরের পরিবারকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার দায়ে মামলার পরামর্শ দিলে পরিবার থেকে আগ্রহ দেখানো হয়নি। এমনকি এই বিষয় নিয়ে পুলিশ যেন আর না এগোয়, সেই অনুরোধও করা হয়। এই অবস্থাতে বেশ কয়েকবার মিতা নূরের পরিবারের লোকদের সঙ্গে পুলিশ দেখা করে কথা বলে। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করে। কিন্তু, মিতা নূরের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা এখন এ বিষয় নিয়ে আর এগোতেই চান না।

কর্মকর্তারা জানান, মিতা নূরের পরিবার তাদের জানায়, তিনি যেহেতু আত্মহত্যা করেছেন, তাই পুলিশ যেন আর এ বিষয়টি নিয়ে আর নাড়াচাড়া না করে। সঙ্গত কারণেই পুলিশ আর এই মামলা নিয়ে আগ্রহ দেখাতে চাইছে না।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ময়না তদন্তের প্রথম অংশ হাতে আসার পর যেহেতু কোনো ধরনের আঘাতের প্রমাণ মেলেনি, তাই এখন অপেক্ষা ভিসেরা রিপোর্টের। আর এই রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত মামলার তদন্তের হাল ছাড়া হয়নি। দু’একদিনের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার আখতার বলেন, “আমরা পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের অগ্রগতির কথা তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু, পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “অভিযোগ ছাড়া আমরা কী করতে পারি! একটা লোককে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই আমরা কতবার জিজ্ঞাসা করতে পারি! সেটা তো আইনসিদ্ধও হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “ভিসেরা রিপোর্ট হাতে এখনো আসেনি। যদি ভিসেরা রিপোর্ট স্বাভাবিক না হয়, সেক্ষেত্রে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কী করবেন, তা তখন ঠিক করা হবে।”

তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার বলেন, “মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মিতা নূর অথবা রানা যার-ই বাসায় যাওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে পুলিশকে তেমনভাবে আর সহযোগিতা করা হচ্ছে না। সে কারণে মামলা নিয়ে পুলিশেরও আর তেমন আগ্রহ নেই।”

এ বিষয়ে মিতা নূরের বাবা ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “পারিবারিক কলহের কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। যেহেতু এটা অপমৃত্যু, তাই, এ ব্যাপারে আমরা আর মামলা-মোকদ্দমায় যেতে চাই না।”

প্রসঙ্গত, অভিনেত্রী মিতা নূর পারিবারিক কলহের জের ধরে রোববার দিনগত গভীর রাতে গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডে ১৬ নম্বর বাসার ড্রয়িংরুমে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনায় পরিবার থেকে বলা হয়, পারিবারিক কলহের জের ধরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পরে মিতা নূরের কাছের লোকসহ পারিবারিকভাবে জানা যায়, তার স্বামী শাহানূর রহমান রানার পরকীয়া মেনে নিতে না পারার কারণেই নিজের ক্ষোভ থেকে আত্মহত্যা করেন মিতা নূর।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ৭, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.