Leadসব সংবাদ

মা তুমি আকাকে কোনো দিন ক্ষমা কোরো না

Sakhawat Aminঢাকা জার্নাল : আমাকে মানুষ করতে অকাতরে বিসর্জন দিয়েছো তোমার সব কিছু। কিন্তু তোমার ঘোরতর বিপদে তোমার সন্তান আজ বড়ই অসহায় মাগো। কখনো ক্ষমা কোরো না আমায়…।

সাংবাদিক সাখাওয়াত আল আমিন এখনও ভাঙ্গা পা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছেন। সেইা ব্যথা তাকে দুর্বল করতে পারেনি।যতটা না তার মায়ের উপর নির্যাতনে কষ্ট পাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

যখন সাংবাদিক সাখাওয়াত আল আমিনের উপর হামলা চলছে, কুপিয়ে তার শরীর যখম করছে। পিটিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে তার পা। তখন গর্ভধারিণী মা তকে বাঁচানোর প্রাণপন চেষ্টা করছেন। ছেলের শরীরে দুর্বৃত্তদের প্রতিটি আঘাত যখন তার মায়ের শরীরে গিয়ে লাগছে, তখন অসহায় সাখাওয়াত আল আমিন।

জ্ঞান ফিরে যখন তার মায়ের শরীরের আঘাত টের পায় সাখাওয়াত তখন থেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বার বার তার মনে হয় নিজের মাকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। আর সেই যন্ত্রনায় বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন- তোমার ঘোরতর বিপদে তোমার সন্তান আজ বড়ই অসহায় মাগো। কখনো ক্ষমা কোরো না আমায়…।

আমি জানিনা আমার কি করা উচিৎ। ঢাকায় থেকেও মামলার আসামি আমার সেজো ভাই। গ্রামে না থেকেও আসামী বড়ভাই। বাবা সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শতবর্ষী এবং অসুস্থ দাদিকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করতেন মা। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
থানায়। হামলার ভয়ে আমার একমাত্র বোনও বাড়ি থাকতে পারছেন না।অযত্নে দাদির যদি কিছু হয়ে যায় জানিনা তার দায় কার!AL AMIN 002

সাখাওয়াত আল আমিন ঢাকা জার্নালকে বলেন, আমার বড় ভাইকে ২৯টি কোপ, আমাকে হত্যার চেষ্টা বা সর্বশেষ সাজানো খুনের মামলায় আমার পরিবারসহ ৮৪ জনকে ফাঁসানোর এই পরিস্থিতি হঠাৎই ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয়। প্রায় ১১ বছর যাবত চলে আসা আমাদের পরিবারকে উৎখাতকরার ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।

সাখাওয়াত আল আমিনের উপর হামলা
গত ১০ জানুয়ারি আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে ১১ জানুয়ারি বাড়ি যায় ৪ দিনের ছুটিতে। গাড়ি যখন দৌলত দিয়া ঘাটে
পৌঁছে তখন বাড়ি থেকে তার মা ফোন দিয়ে বলেন- বাড়িতে মারামারি লাগছে তুই বাড়িতে আসিস না।

সাখাওয়াত দ্বিধায় পড়েন। ঢাকায় ব্যাক করবেন কিনা ভাবার এক পর্যায়ে বাড়িতে চলে যান তিনি। সাখাওয়াত বলেন, একেতো ৮ বছর যাবত আমি গ্রামেই থাকি না। তারপরে এত দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও গ্রামের একটি মানুষের সঙ্গে কোনদিন আমার কথা কাটাকাটি হয়নি। তাই
আমাকে হয়তো কিছু বলবে না।তাছাড়া বৃদ্ধা দাদিদাটা ও বারবার আমার মুখ দেখার আবদার করছিল। এ ভরসায় আমি আর ঢাকায় ব্যাক করিনি।

তিনি জানান, রাত ১১টার দিকে বরইতলা স্ট্যান্ডে পৌঁছলে আমার মা বোনসহ চারজন মেয়ে মানুষ আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।দুইদিন পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও কোন মারামারি বাধেনি। গত ১৪ জানুয়ারি খুব সকালে আমি ঢাকায় ফেরার জন্য তৈরি হই।আমি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল শোরগোল শুনতে পাই। চারিদিক থেকে আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছে। ঘরের চালায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ির ওঠার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ গড়তে গিয়েআমার বাবার মাথায় ইট লাগে। ভাই চাচাতো ভাইসহ আরও কয়েকজন আহত হন। কিন্তু আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নাই মা। এভাবে আধাঘণ্টাখানেক চলার পর আমাদের আরও লোকজন এসে তাদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

al amin 2এদিকে আমার বাসের সময় হয়ে এলে আমি মাকে বলি আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসো। আমার বাড়ি থেকে স্ট্যান্ডে আসার রাস্তা একটিই। আমি মনে সেই বিশ্বাস যে আমি যেহেতু বাড়ি থাকি না কখনও আমার সঙ্গে কারও কথা কাটাকাটিও হয়নি সুতরাং আমাকে হয়তো কিছু বলবে না। তাছাড়া প্রেসকার্ডটাও তখন আমার পকেটেই ছিল।

কিন্তু মাকে নিয়ে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১৫-২০ আমাকে আক্রমণ করে। পিছন থেকে মাথায় বাড়ি দিলে আমি অজ্ঞান হয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যাই। এরপর চলে আমার ওপর বর্বরতা। আমার মা আমাকে রক্ষা করতে আমার ওপরে পড়ে যান। সমানে আঘাত করতে থাকে তাকেও। আমার বাম পা বাইরে পড়ে যাওয়ায়। এই পায়ে ইচ্ছেমত কোপায়।হালকা বন্দুকের একটি গুলিও করে পায়ে। পিটিয়ে আমার বাম পা ভেঙ্গে দেয়। নাকে মুখে আঘাতের আঘাত করায় ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে।

মুমূর্ষ অবস্থায় আমাকে কয়েকজন মিলে মুকসুদপুর উপজেলা কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তারা আমার অবস্থা দেখে চিকিৎসা করার সাহস পায়নি। কারণ নাকের রক্ত কিছুতেই বন্ধ হচ্ছিল না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে ঢামেকে আমাকে যারা দেখতে গিয়েছিলেন তারা দেখেছেন আমার অবস্থা কি হয়েছিল।

এ ঘটনায় আমার ভাই মামলা করলে তার বিরুদ্ধে আবার পাল্টা মামলা দেওয়া হয়। আমার মামলায় কাউকে না গ্রেফতারকরলেও কাউন্টার মামলায় আমার ভাইকে ঠিকই গ্রেফতার করা হয়।

এভাবে প্রায় আড়াইমাস যাওয়ার পর গত শুক্রবার (০২ মার্চ) আলী খান নামের একজন বৃদ্ধ হার্ট এটাক করলে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদ আলী-কবির গ্রুপ প্রচারণা চালায় যে মোল্লারা আলী খানকে খুন করেছে। তারা থানায় খবর দিয়ে হামলা চালায় মাহা মোল্লা নামের আমার এক চাচার বাড়িতে। এসময় জাকির চোকিদার নামে একজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। অথচ তখনও আমাদের লোকজন জানেই না যে আলী খান মারা গেছেন।

পুলিশ আশার কিছুক্ষণ আগে আমাদের লোকজন খবর পায় যে, আলী খান মারা গেছে এবং সেটাকে হত্যা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তাই পুলিশ আসা মাত্রই সব পুরুষ সদস্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ সরাসরি আমাদের বাড়ি ঢুকেই বলা নেই, কওয়া নেই ইচ্ছেমত SHAKHAWAT AMINভাঙচুর চালায় আমাদের বাড়িতে।

কাউকে না পেয়ে মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং মারধর করে তাকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। তুলে নেওয়ার পর আমার বোন গোপালগঞ্জের এসপিকে ফোন দিয়ে মিনতী করলেও তিনি তা কানে তোলেননি।

তবে একটা কথা পরিষ্কার যে এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। পুরোটাই ভিলেজ পলিটিক্স। সাখাওয়াত আল আমিন প্রতিদিন নিজের ফেসবুকে তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন সাংবাদিক হয়েও তার মাকে রক্ষা করতে না পারার কষ্টের কথা বলছেন বারবার।

হিন্দুবাড়ি রক্ষার দায় ।। সাংবাদিক সাখাওয়াতের পরিবারের প্রতি বর্বরতা

‘মা’কে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ

দুঃখিত মা, তোমার পাশে দাঁড়াতে পারলাম না

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ০৩, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.