Lead

‘মা তারকাঁটা খুলে দাও, নানা-নানিকে দেখবো’

Kata_tarঢাকা জার্নাল: ভারতের মুরুটিয়া থানার আঙ্গারদহ গ্রামের শুকুর শেখ।প্রায় ২৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের শহিদ পাঠানের মেয়ে কাঞ্চন পারভিনকে।

শুকুর শেখ বিয়ের পর মাত্র একবার বাংলাদেশে এসেছেন। শুকুর শেখ ও কাঞ্চন দম্পতির ঘরে আলো করে এসেছে কন্যা সন্তান সুবিনা পারভিন। এখন তার বয়স দশ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও নানা নানিকে দেখেনি সুবিনা।

বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কথা কাঞ্চনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মেয়ে সুবিনা প্রায় আকুতি করে বলে ‘মা তারকাটা খুলে দাও, নানা-নানিকে দেখবো’। আমার মেয়ের বয়স এখন ১০ বছর হয়েছে। এখনও নানা-নানিকে দেখেনি সে। প্রায়ই নানা-নানির কথা বলে। শুধু আমার মেয়ে নয় আমারও বাপ-মার জন্য মন পোড়ে।’

গাংনী উপজেলার খাসমহল গ্রামের সোহেল রানা। তার বড় মামা হাশেম আলীসহ অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন বসবাস করেন ভারতের মুরুটিয়া থানার পাকশি গ্রামে।বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রাম দুটির মধ্যে দূরত্ব বলতে তারকাঁটার ব্যবধান। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিনে তারকাঁটা খুলে দুই বাংলার ঈদ পুন:মিলন হলেও এবার বিধিবাম।

দুই বাংলার স্বজনেরা একে অপরকে একনজর দেখার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। এই প্রসঙ্গে সোহেল রানা বলেন, প্রায় ১৫ বছর বড় মামা ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়নি। এবার অনেক ইচ্ছা ছিল ঈদে তাদের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু বিএসএফ-বিজিবি পতাকা বৈঠকের পরে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা (বিএসএফ-বিজিবি) বলেন এবার দুই বাংলার সীমান্তে পাট. ধানসহ নানা সবজির মৌসুম চলছে। তারকাঁটা খুলে দিলে ক্ষেতের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এই কারণে আমাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি।’

ভারতের করিমপুর থানার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণিমা রাণী হালদার। বাবা সুদিপ্ত হালদারের আদিভিটা ছিল মেহেরপুর সদরে। বিশাল মৎস আড়ৎ ছিল তার। কিন্তু আত্মীয়তার সুবাদে তারা ভারতে চলে যায়। পাঁচ বছর বয়সে পূর্ণিমা বাবা মার সঙ্গে ভারতে চলে যায়। সে এখন ভারতে এসএসসি পরীক্ষার্থী।জন্মভিটা এক নজর দেখার ইচ্ছা থাকলেও সেই আশা পূরণ হয়নি।

দেখা না হওয়া প্রসঙ্গে ৩২ ব্যাটালিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল হল্যা হেন মং বলেন,   ঈদসহ নানা ধরণের অনুষ্ঠানে  দুই বাংলার মিলন মেলা হয়। আমি সাতক্ষীরা সীমান্তসহ নানা সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। দুই বাংলার মিলন মেলা হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সদৃঢ় হয়। তবে এবার কেন মেহেরপুর সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা হলো না এটা প্রশাসন বলতে পারবে।তবে আমার মনে হয় বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার ঈদে মিলন মেলা হয়নি।’

মেহেরপুর জেলায় কাজীপুর থেকে আনন্দবাস পযর্ন্ত ১৩টি বিওপি রয়েছে। মেহেরপুর-ভারত সীমান্তের আয়তন ৮১ কিলোমিটার। উভয় দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়িক সূত্রে, কেউ বৈবাহিক সূত্রে, কেউ জন্ম অথবা অনুমোদন সূত্রে উভয় দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে এসব স্বজন বসবাস করলেও তাদের বন্ধন অটুট। তাই স্বজনদের দাবি অন্তত প্রতি ঈদে যেন তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের বাসিন্দা বনে গেছেন শরিফা খাতুন। তবে তার পিতা-মাতা বসবাস করেন ভারতের মেহেরপুর সীমান্তের করিমপুর থানার  ধাড়া গ্রামে। শরিফা বাংলানিউজকে বলেন,  ১০ বছর আগে আমার বাংলাদেশে বিয়ে হয়েছে বাপ-মা ভারতে থাকে। সরকারের কাছে দাবি ঈদের সময় যেন বাপ-মাকে এক ঝলক দেখতে পারি।’

রিপোর্ট- মফিজুল সাদিক ও জুলফিকার আলী কানন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২১,২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.