মানুষের মস্তিষ্কের নতুন মানচিত্র
আফরিনা ফেরদৌস : মস্তিষ্কের কারণেই আমরা মানুষ। কিন্তু কী আছে আমাদের মস্তিষ্কে? প্রায় কয়েক যুগ আগে জার্মান নিউরোলজিস্ট করবিনিয়ান ব্রোডমান সর্ব প্রথম মানুষের মস্তিষ্কের মানচিত্রের মডেল তৈরি করেন। তিনি দেখান যে, মানুষের মস্তিষ্কের অগ্রভাগে প্রায় ৫০টি পৃথক এলাকা রয়েছে যাকে সেলেব্রাল কর্টেক্স বলা হয়।
বর্তমান বিজ্ঞান সেই ১০০ বছর পুরনো মানচিত্রকে বদলে দিয়েছে তাদের গবেষণার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্কে কমপক্ষে ১৮০টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকা রয়েছে যার মধ্যে ভাষা, উপলব্ধি, সচেতনতা, চিন্তা, মনোযোগ এবং সংবেদনশীলতা প্রধান।
মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে এর স্নায়ুকোষ ও তার শাখাপ্রশাখা কীভাবে সংযুক্ত তা দেখিয়েছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সেন্ট লুইস। তিনি হিউমান কানেক্টোম প্রজেক্ট নামে একটি গবেষণা চালান। যেটি সম্পন্ন করা হয় স্বেচ্ছায় অংশ নেওয়া ২১০ জন মানুষের এমআরআই করার মাধ্যমে।
মস্তিষ্কের পূর্বের প্রায় সব মানচিত্র করা হয় টিস্যুর ধারণা থেকে। অর্থাৎ সেলগুলোকে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে দেখা হতো। এবং তার মাধ্যমেই পর্যালোচনা করা হয় যে কীভাবে মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করে যখন তার একটি নির্দিষ্ট অনুভুতির সময় আসে। কিন্তু এভাবে ভালো সমাধান পাওয়া যায়নি। কারণ ভিন্ন ভিন্ন টিস্যুতে এর আকৃতি ভিন্ন লাগত দেখতে এবং কর্মের ব্যাপারে যখন মস্তিষ্কের একটি অংশ কাজ করা বন্ধ করে দিত তখন অপর অংশ কাজ শুরু করে দিত।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ম্যাথেউ গ্লাসার নতুনভাবে মস্তিষ্কের গঠন, কার্যক্রম ও সংযুক্ততা সম্পর্কে চিত্র তৈরি করেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে মস্তিষ্কে ৮৩ টি এলাকা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি আরো ৯৭ টি এলাকা চিহ্নিত করেন যা মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে। তিনি স্ক্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগীকে পরীক্ষা করেন।
মস্তিষ্কের এই নতুন মানচিত্রের ভুমিকা অনেক। গ্লাসারের মতে এটি সার্জিক্যাল প্লানিংয়ে বিশেষ সাহায্য করবে। অর্থাৎ বিস্তৃত ধারণা থাকলে মস্তিষ্কে কোনো অপারেশন করার সময় তা কাজে লাগবে।
জার্মানির জুলিচের স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মেডিসিন বিভাগের স্নায়ুবিজ্ঞানী সিমন ইকহফ বলেন, মস্তিষ্কের বৃহত্তর মানচিত্র আসলে মস্তিষ্কের গঠনগুলোকে বোঝার জন্য।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটেশনাল নিউরোসাইন্সের একজন অধ্যাপক বলেন, একটি অসাধারণ কাজ করার এবং করতে পারার মধ্যে যে সৌন্দর্য রয়েছে তা আসলে অপ্রশংনীয়। এটি আসলে বছরের পর বছর চলে আসা মানুষের মস্তিষ্ক সম্পর্কে ধারণা ও কার্যক্রমকে বদলে দিতে সহায়তা করবে। আফরিনা চৌধুরী।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২২, ২০১৬।