Leadস্পটলাইট

মধ্যরাতে বৈঠকে সমঝোতা : নিউমার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত

নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে নিউমার্কেট এলাকার সব দোকান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতের সমঝোতা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার পরে সংবাদ সম্মেলন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এসব তথ্য জানান।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা মধ্যরাতে গড়ায়। ঢাকা কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) সভা কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বৈঠকে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকরাও অংশ নেন।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাল বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে নিউ মার্কেট খুলে দেওয়া হবে। হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মার্কেট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং সেল করা হবে। অভিযোগ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আগামীকাল থেকে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে নেহাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেওয়া হবে। সাংবাদিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে হামলাকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘হতাহত সকল পরিবারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দেখা করবেন, সমবেদনা জানাবেন এবং আর্থিক অনুদান দেবেন।‘

হল খোলা রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হল খোলা রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত নেবে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের ইমোশনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার জন্য আমরা সবাই লজ্জিত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিটি মার্কেটের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ক্রেতা হয়রানি ও নারীদের হয়রানি বন্ধে কোথায় অভিযোগ করতে হবে তা মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় স্টিকারে লেখা থাকবে। এছাড়াও বিষয়গুলো ব্যবসায়ীরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল আইডি কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, হয়রানি বন্ধে সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষকদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে বলা হয়, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘

পুলিশের ডিসি, এডিসি ও ওসি প্রত্যাহার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম বলেন, ‘ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য ফরমাল তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফুটপথ, হকার কেন্দ্রিক যে সমস্যা সেগুলোর ব্যবস্থা নেবো, চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। তৃতীয়পক্ষ ঘটনার সঙ্গে ছিল তাদের চিহ্নিত করে সময় মত প্রকাশ করবো ব্যবস্থা নেবো। যদি কেউ মামলা করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ চলে এসেছে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবো।

ঘটনার শেষ মুহূর্তে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষ ঘটনায় এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল বলেন, ‘ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতি নেতারা রয়েছেন। আমরা ছাত্র, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি কোর কমিটি গঠন করবো। ছাত্রদের কোনও সমস্যা হলে আমাদের কাছে বিচার দেবেন। শিক্ষক বা ছাত্র; কারও কোনও সমস্যা থাকলে আমাদের কারও কাছে বিচার দিলেই ব্যবস্থা নেবো।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা ছিলাম। প্রশাসনের সহযোহিতায় একটি সমাধান করতে পেরেছি।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (২০ এপ্রিল) দিনগত রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) মিলনায়তনে শিক্ষক, ছাত্র, পুলিশি প্রশাসনের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি ও ব্যবাসয়ী প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দোকানপাট খোলার বিষয়ে বৈঠকের জন্য দফায় দফায় সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে রাত সাড়ে নয়টায়, তারপর সাড়ে ১০টায়, সাড়ে ১১টায় এবং সর্বশেষ সাড়ে ১২টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা কলেজে রাতে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের পর নির্ধারিত স্থানে সাড়ে ১২টার পর বৈঠকে বসেন প্রতিনিধিরা।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগর রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি দোকানে ‘কথা কাটাকাটি’র জের ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরদিন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে আবার দিনভার চলে এই সংঘর্ষ। বুধবার (২০ এপ্রিল) সারাদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিকালে আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা আহত হন।

এসংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের নাহিদ হোসেন (২০) নামেরএক ব্যক্তি আহত হয়ে পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া সংঘর্ষে গুরুতর আহন হন ঢাকা কলেজের ছাত্র শোমররফ, কাননসহ তিনজন। মোশররফ স্কয়ার হাসপাতালে এবং অন্য দুইজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।