মক্কা মদিনার পথে পথে

জুলাই ১, ২০২৪
মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন খান

মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন খান 

 ২০২৪ সালে হজ পালনকারী একজন তীর্থযাত্রী হিসাবে,আমি সৌদি সরকারের অবিশ্বাস্য সাংগঠনিক প্রচেষ্টা এবং সহযাত্রীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করার গভীর সুযোগ পেয়েছি। এই আধ্যাত্মিক যাত্রা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত শুদ্ধিই নিয়ে আসেনি বরং দুটি পবিত্র শহর: মদিনা ও মক্কায় গ্রাহক পরিষেবা এবং পরিচালনা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছি তা মুগ্ধ করেছে।

মদিনাঃ শান্তির শহর ও ব্যতিক্রমী সেবা

মদিনা,তার প্রশান্তি এবং নির্মলতার জন্য পরিচিত,উচ্চতর গ্রাহক পরিষেবা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাদের। শহরের প্রশাসন সমস্ত তীর্থযাত্রীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে নিয়মের মধ্য দিয়েই সবকিছু নিশ্চিত করছিল। গ্রাউন্ড-লেভেল থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত, প্রত্যেক ব্যক্তি নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেটা দেখলাম কর্মীরা কাজগুলির নিজ দায়িত্বে বুঝে নিচ্ছিল। একই সঙ্গে তারা পরাস্পরকে সহায়তা করছিল কাজ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। এই সময় তারা নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কাজটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছিল।

তবে, সৌদি সরকারের প্রচেষ্টার পরও বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে  প্রশাসন ও তীর্থযাত্রীরা বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। আমার যেটা মনে হয়েছে দেশটির উচ্চ পর্যায় থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি গ্রাউন্ড লেভেলে যারা কাজ করছেন তারা। তাদের আচরণগুলো ছিল কিছুটা রোবোটিক, আর ভাষাগত সমস্যার কারণে সেটি আরো বেশি চোখে পড়ছিল। কারো কারো মধ্যে সহযোগিতা না করার মানসিকতাও ছিল। সেসব কারণে অতিরিক্ত ভিড় সবার মধ্যে একটা অসহিষ্ণু মনোভাব তৈরি করছিল।

হজযাত্রীদের মধ্যেও একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সহজে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিল। এছাড়া এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তারা ছিলেন বেশ অমনযোগী। প্রতিবছর লাখ লাখ লোক সেখানে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে মক্কা ও মদিনার গ্রাহক সেবার দিকে আরো নজর দেয়া উচিত বলে মনে করি-

বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো প্রশস্ত করা কারণ, হজযাত্রীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন সেসব যেনো দ্রুত সমাধান করা যায় সেই চেষ্টা করা। এছাড়া এই সময়ে যারা ওখানে কর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদের আরো উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া  হাজীদের কীভাবে আরো উন্নত সেবা দেয়া যায় সে বিষয়টির দিকে মনযোগ দেয়া।

হজের অভিজ্ঞতা অন্য যেকোনো অভিজ্ঞতার মতো নয়। মক্কায় কাটানো দিনগুলি প্রস্তুতি,চ্যালেঞ্জ এবং আধ্যাত্মিক কার্যকলাপে ভরা।

এই বিষয়গুলোকে আমি চেষ্টা করবো ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে।

মক্কায় পৌঁছে,আমরা প্রতিদিন ৭-১০ কিলোমিটার হেঁটে,সামান্য ঘুমিয়ে এবং তীব্র সূর্যালোক সহ্য করে নিজেদের প্রস্তুত করেছিলাম। তবে হজের মূল পাঁচ দিনের অভিজ্ঞতা অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় অতুলনীয় ও অকল্পনীয় ছিল। এ থেকে আগামীতে যারা যেতে চান তাদের জন্য কিছু নির্দেশিকা উল্লেখ করলাম-

  • ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রতিদিন ৭-১০ কিমি হাঁটার জন্য প্রস্তুত থাকুন। যানবাহন সীমিত হওয়ায় আপনাকে বেশিরভাগ হেঁটে চলাফেরা করতে হবে।
  • নিয়মিত হারাম শরীফে নামাজে উপস্থিত হওয়া এবং নফল নামাজ বা অন্যান্য কাজ করা।
  • হজের প্রধান পাঁচটি দিন (৮ই থেকে দ্বাদশ জুল-হিজ্জাহ) শুধু শারীরিক দৃঢ়তা নয়,দৃঢ়সংকল্প,উৎসর্গ এবং ধৈর্যেরও প্রয়োজন। এই দিনের চাহিদাগুলির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন,কারণ এগুলি কেবল শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর নয়,এর জন্য প্রচুর আধ্যাত্মিক মনোযোগ এবং স্থিতিস্থাপকতাও প্রয়োজন।
  • অন্যের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করবেন না;আপনার কাজ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে নিন। আপনি সবসময় যে দলবদ্ধ হয়ে চলতে পারবেন তেমন না। সেক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করার মানসিকতা রাখুন এবং হারিয়ে গেলেও সঙ্গীদের কীভাবে খুঁজে পাবেন তার পরিকল্পনা নিয়ে রাখুন।

  • ভ্রমণ সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত দলের সাথে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। মূল কার্যক্রম চলাকালীন মানসিক সমর্থনের জন্য পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গে হজ করা উত্তম।
  • আপনি এখান থেকে সবকিছু ঠিক করে গেলেও এর যে ব্যতয় হবে না তা কিন্তু নয়। তাই স্থানীয় যে ব্যবস্থাপনা আপনি পাবেন তা অনেক সময় আপনাকে হতাশ করতে পারে। বিশেষ করে রুম ব্যবস্থাপনা, খাবার, সহায়তা ও অন্যান্য প্রতিশ্রুতি। সেক্ষেত্রে নিজে নিজে অনেক বিষয় পরিচালনার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে খাবার খুঁজে নেয়া।
  • স্থানীয়দের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আপনি দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। তবে পরামর্শ হলো বিরোধ এড়ানো। চরম ধৈর্য ধরে রাখুন এবং আল্লাহর নির্দেশনা এবং পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রার্থনা করুন।
  • মনযোগ দিন আধ্যাত্মিকতার দিকে। জিকির (আল্লাহর স্মরণ) এবং নামাজে যতটা সম্ভব সময় ব্যয় করুন। তা না হলে বাড়িতে ফিরে,আপনি আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের জন্য আপনার সময় সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার না করার জন্য অনুশোচনা করতে পারেন।

হজ করা একটি গভীর আধ্যাত্মিক যাত্রা যা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতির দাবি রাখে। এই নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করে, আপনি আরও পরিপূর্ণ এবং সুন্দর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং আমাদেরকে এই পবিত্র তীর্থযাত্রা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও ধৈর্য দান করুন।

আল্লাহ সব তীর্থযাত্রীদের হজের বরকত দান করুন এবং তিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম উপায়ে তা পালন করার সুযোগ দান করুন।

 

লেখকঃ কাস্টমার সার্ভিস স্পেশালিস্ট