ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংস্কৃতির উপর হামলার প্রতিবাদে উদীচীর বিক্ষোভ সমাবেশ
দেশজুড়ে মৌলবাদের তাণ্ডব ও ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সমস্ত ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংস্কৃতির উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ১৬ জানুয়ারি শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এতে বক্তব্য রাখেন, সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-এর বংশধর শেখ সাদী খান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শফিউদ্দিন আহমেদ, প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রবীর শিকদার, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসুল, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান ইকবাল, উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রহমান মুফিজ, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সনাতন মালো উল্লাসসহ বিশিষ্ট জনরা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আরিফ নূর।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উন্মত্ত, উগ্র, ধর্মান্ধ মাদ্রাসা ছাত্রদের দ্বারা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি, সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-এর নামাঙ্কিত সঙ্গীত বিদ্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, তাঁর ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র এবং স্মতিচিহ্ন ধ্বংস করা, জেলা শিল্পকলা একাডেমী কার্যালয়ে ভাংচুর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সসহ রেলওয়ে স্টেশনসহ ও পুরো শহরে তাণ্ডবের ঘটনা কোন স্বতঃস্ফুর্ত ঘটনা নয়। মোবাইল ফোনের দাম নিয়ে বচসার মতো সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে দিনব্যাপী তাণ্ডব চালানো হলেও এর মূল লক্ষ্য ছিল প্রগতিশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা বা মাদ্রাসা ছাত্র ও দোকানির বচসা কোনটির সাথেই ওইসব সংগঠনের কারো সম্পৃক্ততা ছিল না। তাই, এর পেছনে অন্য কোন হীন উদ্দেশ্য বা মৌলবাদী চক্রান্ত ও উস্কানি রয়েছে সে বিষয়টি পরিস্কার বলে মন্তব্য করেন তারা। বক্তারা আরো বলেন, সারা দিন ধরে তাণ্ডব চললেও তা ঠেকানো বা প্রতিহত করার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তেমন কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে প্রগতিশীল শক্তির উপর একের পর এক হামলার বিষয়েও রাষ্ট্রের কোন কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই মন্তব্য করে বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তারা সাত দিনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংস্কৃতির উপর হামলা এবং তাণ্ডবের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের শিল্পী-কর্মীরা এবং সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংস্কৃতি রক্ষা তথা অস্তিত্ব রক্ষার এ লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সামিল হওয়ার জন্য উদীচীর বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আহবান জানান। প্রয়োজনে দেশব্যাপী বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানান বক্তারা।