বোর্ডের প্রশ্ন ফেসবুকে, কারিগরি বোর্ডে রদবদল
ঢাকা জার্নাল: প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ব্যাপক রদবদল করেছে সরকার। দায়িত্ব অবহেলার কারণে বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলিপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই’২০১৫) শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগারি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও এক পরিচালককে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্বহীনতা, অবহেলার জন্য কারিগরি বোর্ডের অন্তত দুই ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হবে।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মীরকে ঢাকা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) শেখ মফিজুর রহমানকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আর বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) মো. আব্দুর রাজ্জাককে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সুশীল কুমার রায়কে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলমকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে বদলিপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে শিগগিরই একজনকে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বোর্ড থেকে ফেসবুকে প্রশ্ন
গত ২৯ জুন সকাল ১০টা থেকে কারিগরি বোর্ডের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সপ্তম পর্বের সমাপনী পরীক্ষার ‘ডিজাইন অব স্ট্রাকচার-২’ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের দিন প্রশ্ন ফাঁস হয়। এরপর পরীক্ষা স্থগিত করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
ফেসবুক থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন সংগ্রহ করে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অফিসে তা জমা দেন।
বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য কারিগরি বোর্ডের সচিব আব্দুল হক তালুকদার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী ও বোর্ডের উপ-পরিচালক (গবেষণা ও মূল্যায়ন) রাজু মো. শহীদুল ইসলামের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের প্রশ্ন বিজি প্রেসে ছাপা হলেও অনান্য স্তরের প্রশ্নগুলো বোর্ডের অভ্যন্তরীণ প্রেসে ছাপানো হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্ন ফাঁসের অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি কারিগরি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট শাখায় অনেক অনিয়ম ও ত্রুটি পেয়েছে।
‘প্রশ্ন ছাপানোর শাখা যতটা সংরক্ষিত ও গোপনীয়তা থাকার কথা তার ব্যতয় ঘটেছে। কর্মকর্তাদের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হয়।’
তিন সদস্যের কমিটি হলেও টেকনিক্যাল বিষয়ের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক পর্যায়ের একজনের সহায়তা নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুর থেকে একজন ফেসবুকে প্রশ্ন আপলোড করেছে, তাকে আইডেনটিফাই করতে পেরেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটি নির্ধারিত পাঁচ দিনের মধ্যে চারদিন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনুসন্ধান চালিয়ে ৬ জুলাই বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৪ জনের সাক্ষাৎকার ও ২৬ জনের লিখিত স্টেটমেন্ট গ্রহণ করেছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের মোবাইলও সিজ করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ছাপাতে হবে তিন সেট প্রশ্ন
ভবিষতে ফাঁস এড়াতে তিন সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া প্রশ্নপত্র তৈরির কম্পিউটারে ইউসবি পোর্ট-কেবল বিচ্ছিন্ন, প্রিন্টার উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে স্থানান্তর, সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করার সুপারিশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট শাখার তালাচাবি পরিবর্তন, প্রশ্নপত্র কম্পোজের কাজে নিয়োজিতদের বোর্ড থেকে নির্ধারিত পোশাক দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে স্থগিতকৃত ডিজাইন অব স্ট্রাকচার-২ পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ০৯, ২০১৫।