শিক্ষা-সংস্কৃতি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি ডিগ্রির অনুমতি দিতে বিধিমালা হচ্ছে

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার সুযোগ দিতে বিধিমালা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিগগিরই বিধিমালা তৈরি সংক্রান্ত কমিটি গঠন করবে সংস্থাটি। কমিটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খসড়া বিধিমালা তৈরি করে কমিশনে জমা দিতে হবে।

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার সুযোগ দিতে ইউজিসিকে তাগাদা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ১২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি প্রোগ্রাম নেই। আমি ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) কথা বলেছি। আমি বিশ্বাস করি দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষমতা অর্জন করেছে। কাজেই তাদের যেন সুযোগ দেওয়া হয়। বিষয়টি যেন তারা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে, সেই অনুরোধ করছি।

শিক্ষামন্ত্রীর এই তাগাদা দেওয়ার পর ইউজিসি দ্রুত বিধিমালা করার উদ্যোগ নেয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমফিল এবং পিএইচডি করানোর ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা বা বিধিমালা করতে হবে। বিধিমালাটি দ্রুত শেষ করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিধিমালার খসড়া তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশনে খসড়া জমা দেওয়ার কথা বলা হবে। খসড়া জমা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে খসড়া বিধিমালা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত হবে পূর্ণ কমিশনের বৈঠকে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য।

কারা পাবে এই সুযোগ- জানতে চাইলে ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ রয়েছে, তারা পিএইচডি করানোর সুযোগ পাবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইডি করা শিক্ষক রয়েছেন, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা বিষয়ে পিএইচডি করানোর সুযোগ থাকবে। বিধিমালায় সব উল্লেখ থাকবে। তবে যা কিছু হবে পূর্ণ কমিশনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর।

ইউজিসির সূত্রে জানা গেছে, পিএইচডি করার ক্ষেত্রে গবেষণার বিষয়ের প্রস্তাব অনুমোদন নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে। মান নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ ব্যবস্থা রাখা হবে। পিএইচডি করার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি কমিশনের নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে। পিএইচডি করানোর ক্ষেত্রে সুপারভাইজার হিসেবে ন্যূনতম সহযোগী অধ্যাপক হতে হবে। গাইড টিচার ছাড়াও দেশের অন্য একজন এবং বিদেশের একজন তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে থাকবেন পিএইচডি করানোর ক্ষেত্রে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১৫টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ, গবেষকদের ভাতা ও আবাসনসহ সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সংকট থাকলেও তাদের এমফিল এবং পিএইচডি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও তারা গবেষকদের পিএইচডি ডিগ্রি করাতে পারছে না। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও উন্নত অবস্থানে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ইউজিসির একটি সূত্র জানায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দেওয়া পিএইচডি ডিগ্রির মান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমোদন দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সনদ-বাণিজ্যের ভয়ও পাচ্ছে ইউজিসি। তবে বিধিমালার শর্ত দিয়ে তা মনিটরিং করলে সমস্যা হবে না।