শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর

12ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল, মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরনো ফাঁসির মঞ্চে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এ খবর নিশ্চিত করেন।

জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামনের পর তৃতীয় কোনো শীর্ষ জামায়াত নেতা এবং একইসঙ্গে এই প্রথম কোনো সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও  গণহত্যায় ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিজয়লাভের পূর্বে দেশ ও জাতিকে মেধাশূন্য করে দেয়ার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে যে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তার অন্যতম ‘মাস্টামাইন্ড’ ছিলেন আলী আহসান মুজাহিদ।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বাংলাদেশ আরেকটি ইতিহাসের সূচনা করলো এবং ইতিহাসের দায় মোচনের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

এদিকে ফাঁসির দণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষা নিয়ে নানা নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। তার আগে সর্বশেষ শনিবার দুপুর দুইটার দিকে অপর ফাঁসির আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন না। এ নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তির মধ্যে রাত পৌনে ১০টার দিকে রাষ্ট্রপতি যখন তার কাছে পৌঁছানো সাকা-মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করলেন তখন ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে মুজাহিদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে গেলে সর্বোচ্চ আদালতও ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ওই দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল বিচারিক আদালত।

একই রায় এসেছিল সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নিযার্তনের ঘটনায়। আপিল বিভাগের রায়ে প্রথম অভিযোগে আসামির আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। সপ্তম অভিযোগে তার সাজা কমিয়ে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আর ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যাদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদকে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আপিল বিভাগের রায়ে সেই সাজাই বহাল রাখা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মুজাহিদকে। ওই সাজা তার প্রাপ্য বলে আপিল বিভাগও মনে করেছে। এছাড়া দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে খালাস দিয়েছিল। এ কারণে এ দুটি অভিযোগ আপিল বিভাগের রায়ে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.