বিড়াল উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের স্কাই লিফট কর্মযজ্ঞ সচিবালয়ে
ঢাকা জার্নাল: একটি শান্ত প্রাণী, চিরশত্রু আরেক প্রাণির ধাওয়ায় গাছে উঠেছে তিন দিন আগে। উঠেও রক্ষা নেই, সেখানেও কাকের হানা। গাছেই আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নেয় বিড়াল।
ভীত প্রাণী- একটি বিড়ালের এমন দশা চোখে পড়ে এক ড্রাইভারের। খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনীকে। এরপর শুরু উদ্ধার যজ্ঞ।
ফায়ার সার্ভিসের ১৭০ ফুট উচ্চতায় উদ্ধার করতে সক্ষম স্কাই লিফট এসে প্রায় ৩০ ফুট ওপর থেকে এই বিড়ালটিকে উদ্ধারে সাক্ষী হয় সচিবালয়ে কর্মরত কয়েকশ’ মানুষ।
গত মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে কুকুরের ধাওয়া খেয়ে চার নম্বর ভবনের সামনে একটি গাছে উঠে পড়ে সাদা রঙের বিড়াল। ওই গাছে রয়েছে কাকের বাসা। কাকের হামলার শিকার বিড়ালটি ডাল বেয়ে আসে পাশের কৃষ্ণচূড়ায়। সেখানেও কাকের হানায় প্রাণের ভয়ে আরও ওপরে উঠে বিড়ালটি।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর গাড়িচালক আজগর আলী মুন্সী এবং ওই মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বিড়ালটিকে তিনতলার জানালা দিয়ে উদ্ধার করতে চাইলেও পারেননি। টাকা দিয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের অনুরোধ করে উদ্ধার কোরও চেষ্টা করেন।
ক্রমাগত কাকের হামলা আর অভুক্ত বিড়ালটির ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা আজগর আলী ও সিরাজুল ইসলামকে ব্যথিত করে তোলে।
আজগর আলী বলেন, বিড়ালটির জন্য মায়া হচ্ছিল, কয়েক দিন দেখছি, বাসায় গিয়েও মনে শান্তি হচ্ছিল না। আজ (বৃহস্পতিবার-০৩ মার্চ) এসে দু’জন মিলে সচিবালয়ের ফায়ার সার্ভিসে খবর দেই।
বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার পর বিড়ালটিকে উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের হেড কোয়ার্টারে খবর পাঠানো হয়।
সচিবালয় ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের ইনচার্জ আবুল হোসেন জানান, হেড কোয়ার্টারের ওয়ার হাউজিং ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলামের নেতৃতত্বে ১৭০ ফুট অর্থাৎ ১৭ তলায় উঠতে সক্ষম স্কাই লিফট নিয়ে বিকাল পৌনে চারটার দিকে কর্মযজ্ঞ শুরু করো হয়। এরপর শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানে এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী জহিরুল ইসলামের বিড়াল উদ্ধারের কাজ শুরু করি। তবে ভয় পেয়ে তখন আরও উপরে উঠছিল বিড়ালটি।
ধীরে ধীরে ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীর সাবধানী তৎপরতায় হাতে এলো বিড়ালটি, আদর করে আলতো করে ধরে বিড়ালটিকে নিচে নেমে আনা হলো, তখন উৎসুক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাধ ভাঙ্গা উল্লাস, করতালি…।
এখন কোথায় রাখা হবে, কী খাবে, চিকিৎসা— ইত্যাদি পরামর্শ-নির্দেশনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিড়ালটি নিয়ে গেলেন চার নম্বর ভবনের টিনসেড ক্যান্টিনে। সেখানে ভাত, পানি, মাছের কাঁটা খেতে দেওয়া হলো। প্রাণিপ্রেমি আজগর নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মাছের পিচ আনাতে বললেন। একটু খেয়ে নিস্তার পেল বিড়ালটি।
ক্যান্টিন থেকে পাশের ফাস্টফুডের দোকনে আনা হলো, সেখানেও বিস্কুট খেতে দিলেন দোকানের কর্মীরা। এরপর সেখানেই ছাড়া হলো বিড়ালটি, লেজ উঁচিয়ে বিড়ালটি তখন দৌড় দিল নিরাপদ আশ্রয়ে।
উদ্ধারের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আজগর বলেন, ‘কী যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না।’
খুশিতে চোখের কোনায় জল আজগরের।
ফায়ার সার্ভিসের সচিবালয় ইউনিটের ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, বিড়ালটিকে নিরাপদে উদ্ধার করাই ছিল চ্যালেঞ্জ, কারণ সে তিন দিন কিছু খায়নি।
হেড কোয়ার্টারের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রত্যেকটা জীবন আমাদের কাছে মহামূল্যবান, সেই লাইভ সেভিং করার জন্য এসেছি। প্রত্যেক প্রাণের জন্য ফায়ার সার্ভিস।
১৭০ ফুট পর্যন্ত এই স্কাই লিফট দিয়ে উঠতে সক্ষম জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকা পড়া একটা চিলকেও জীবিত উদ্ধার করেছেন।
নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা ছাড়াও আমাদের লাইভ সেভিং ফোর্স আছে, জানান জহিরুল।
বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে স্কাই লিফট চলে যায় হেড কোয়ার্টোরের উদ্দেশ্যে।
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ০৩, ২০১৬।