Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ বাস্তবায়নের উদ্যোগ, ফের উত্তপ্ত পিডিবি

8ঢাকা : নতুন কোম্পানি গঠনের খবরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বের্ডে (পিডিবি)। সংস্থাটি ভেঙে নতুন কোম্পানি গঠনের এই খবরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ।

গত বছর ও চলতি বছরের জুনের দিকে একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু  পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ পিছু হটে। পিডিবি ভাঙার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে হয়। নতুন করে আবরও পিডিবি ভেঙে নতুন কোম্পানি করার প্রক্রিয়া শুরু হলে আন্দোলনে নেমেছে কর্মচারী-কর্মকর্তারা।

সূত্র জানিয়েছে,  রাজশাহী এবং রংপুর অঞ্চলের বিদ্যু বিতরণ ব্যবস্থা প্রস্তাবিত নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের জন্য সম্প্রতি পিডিবিকে নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের এ অঞ্চলের সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নতুন কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।

মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে সরকার সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়ন  সামনে থেকে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পিডিবির ভাঙন প্রক্রিয়া রুখতে তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নানান কর্মসূচি ঘোষণা করা করেছে।

পিডিবি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা পিডিবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীই চাকরি হারানোর ভয় করছেন। কারণ সরকারের তরফ থেকে এখনও সার্বিক বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়নি। তারা গোল্ডেন হ্যান্ডচেকের মাধ্যমে বিদায় আতঙ্কে আছেন।’

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দাতারা বিদ্যুৎখাত সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈঠকেও বিশ্বব্যাংক পিডিবির সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের পক্ষে। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে পিডিবিকে বিতরণ কার্যত্ক্রম থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। রংপুর-রাজশাহী, ময়মসিংহ-টাঙ্গাইল এবং সিলেট এবং চট্টগ্রাম এলাকায় পৃথক বিতরণ কোম্পানি করে বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে। এর প্রথমটি হচ্ছে রংপুর এবং রাজশাহী অঞ্চল নিয়ে। এতে লোকশান কবে আসবে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

এদিকে সোমাবার বিদ্যুৎ ভবনে নতুন কোম্পানি গঠনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পিডিবির কর্মকর্তা প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে পিডিবি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ছাড়াও কর্মচারী কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। বক্তরা বলেন, দুর্নীতিবাজদের ষড়যন্ত্রে পিডিবিকে ভাঙা হচ্ছে । আগেও কয়েক দফা ভাঙনের শিকার সংস্থাটিকে আর ভাঙতে দেয়া হবে না।

সমাবেশে থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নানান কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। এরমধ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার পিডিবি (ওয়াপদা) ভবনের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল, বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধে স্মারকলিপি পেশ। এছাড়া ৩০ এবং ৩১ ডিসেম্বর যথাক্রমে রংপুর এবং রাজশাহীতে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফিস করেন। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ খাতের বেশ কিছু প্রশাসনিক সংস্কারের এর অংশ হিসেবে পিডিবিকে করপোরেশনে রূপান্তরে নির্দেশ দেন। চলতি বছর দুই দফা অফিস করে এ নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগ পিডিবিকে ভেঙে ‘নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-নওজোপাডিকো’ নামে একটি কোম্পানি গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।  রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে নতুন কোম্পানিটি গঠন করা হয়। পরিচালকসহ বেশ কিছু লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোম্পানিটি কয়েকবার বোর্ড সভাও করেছে।কিন্তু কোম্পানি তার কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে পারেনি। কোম্পানিটি চালু করতে বিদ্যুৎ বিভাগ কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও পিডিবির কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটে।

সম্প্রতি ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম সমঝোতা স্বারক চুক্তি (এমওইউ), পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং পাওয়ার সেলস এগ্রিমেন্ট (পিএসএ) স্বাক্ষর করতে পিডিবির চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় আবার পিডিবিকে সম্পত্তি হস্তান্তরে চিঠি দেয়। তারপরই পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে পাওয়ারসেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই বিদ্যুৎ খাত ঢালাওভাবে বেসরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা অনুমোদন করে। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল আইপিপির মাধ্যমে বিদু্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি। এখন বিদ্যুৎ খাত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দখলে চলে গেছে। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পিডিবিকে ভেঙে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই অথরিটি (ডেসা) করা হয়। পরে  ডেসা ভেঙে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই  কোম্পানি (ডেসকো) তৈরি করা হয়। এছাড়া পিডিবি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এ পর্যন্ত যতগুলো সংস্কারকাজ হয়েছে, কোনো সংস্কারই ভালো ফল বয়ে আনেনি। বরং প্রতিটি সংস্থা দুর্বল হয়েছে, ব্যয় বেড়েছে, দুর্নীতি বেড়েছে। তাই পিডিবিকে আরো ভাগ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.