‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন বস্তির সংস্কৃতি’
ঢাকা: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষিত মানুষের বস্তি হচ্ছে। বস্তিতে যে সংস্কৃতি আছে, তা হচ্ছে এখানে। হানাহানি, কলহ, ছিনতাই ও রাহাজানি হচ্ছে। ছাত্ররা নারী লাঞ্ছনা করছে, এমন খবরও শুনতে হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “২৫ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র সংসদ নেই, এটা ভাবা যায়? সাংস্কৃতিক চর্চা নেই, বিতর্ক নেই, বক্তৃতা নেই, আদান-প্রদান নেই, আলোচনা নেই। ছেলেমেয়েরা কী করছে, তার খোঁজ নেই। এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।” সিরাজুল ইসলাম বলেন, “জাতীয়তাবাদের চেতনায় যদি সমাজকে পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে জনসংখ্যা বাড়ছে, জঙ্গিবাদ বাড়ছে, ধনীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে-এতে করে দেশ একটা ভয়ংকর জায়গায় পড়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শতকরা ২০ ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত। ৮০ ভাগ মানুষ সুযোগবঞ্চিত। ২০ ভাগের মধ্যে আবার দুই ভাগ উচ্চবিত্ত। তারা সম্পদ বিদেশে পাচার করছে। সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।”
’৫২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারা বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা প্রধান ব্যর্থতাও।”
তিনি বলেন, “দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করতে পারিনি। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিভক্ত ও গভীর হয়েছে। শিক্ষা ঐক্য সৃষ্টি না করে বৈষম্য করছে। এ বিষয়ে আমরা উদাসীন থাকছি। এ ব্যর্থতার কারণে আমরা দাঁড়াতে পারছি না।”
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচিত ‘মুনির চৌধুরীর প্রতি খোলা চিঠি’ থেকে কিছু অংশ পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি করেন কাজী মদিনা।